অভাব না দেখা মানুষটি এখন ভিখারি
গাইবান্ধায় প্রতি বছর বন্যা আর নদীভাঙনে বহু মানুষের স্বপ্ন ভেসে যায়। ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও বাপ-দাদার সম্পত্তি হারিয়ে ভূমিহীন হয়ে যায় হাজার হাজার মানুষ।
চরের অনেক সম্পদশালী ব্যক্তি সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান। অসহায় হয়ে নদীভাঙা মানুষগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁধ কিংবা অন্যের জমিতে আশ্রয় নেন। সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী মানুষের প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বাঁচতে হয়।
নদীভাঙনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া সম্পদশালীদের একজন ফুলছড়ি উপজেলার আব্দুল ওয়াহাব মিয়া (৬০)। ৫-৬ বিঘা ফসলি জমি, গরু-ছাগল, পুকুরভরা মাছ, বড়বাড়ির মালিক ছিলেন তিনি। কালাসোনার চরে বসবাস করতেন তিনি। নদীভাঙনে সব হারিয়ে তিনি নিঃস্ব। জীবনে অভাব না দেখা মানুষটি এখন পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খান।
উড়িয়া ইউনিয়নের দড়িয়ার ভিটা গ্রামে গিয়ে ওয়াহাব মিয়ার সঙ্গে দেখা হয়। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, কালাসোনার চরের মানুষ সুখে-শান্তিতে ছিল। মরিচ, ভুট্টা ও বাদামসহ বিভিন্ন ফসলে ভরপুর থাকত চর। দুঃখ-কষ্ট ছিল না মানুষের।
বাপ-দাদার আমল থেকে আমরা সম্পদশালী। অভাব কাকে বলে বুঝতাম না। কারণ কোনো কিছুর অভাব ছিল না। সেসব কথা মনে হলে কান্না আসে। চরে দোতলা প্রাইমারি স্কুল ছিল। পাঁচ বছর আগে চরে ভাঙন শুরু হয়। গত বছর ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে যায় চর। ভূমিহীন ও নিঃস্ব হয়ে যায় চরের ১০ হাজার মানুষ।
ওয়াহাব মিয়া
তিনি বলেন, নিঃস্ব মানুষগুলো নদীর পাড়ে, বাঁধে এবং অন্যের জমিতে আশ্রয় নেয়। সবকিছু হারিয়ে আমি এখন পথের ভিখারি। একখণ্ড জমি ২০ হাজার টাকায় বন্ধক নিয়ে বাড়ি করছি। অভাবের কারণে এখনো বাড়ির কাজ শেষ করতে পারিনি। এককালে ভালো ছিলাম। এখন দিনমজুরের কাজও পারি না। বাধ্য হয়ে সাইকেল মেরামতের কাজ করছি।
ওয়াহাব মিয়ার মতো অবস্থা শত শত মানুষের। সবাই কালাসোনার চরের বাসিন্দা ছিলেন। একসময় সুখে থাকলেও এখন সবাই ভূমিহীন।
দড়িয়ার ভিটা গ্রামের বাসিন্দা বালিকা বেওয়া বলেন, খুব কষ্টে আছি। একবার নদী সব নিয়ে গেছে। এখানেও ভাঙন আতঙ্কে আছি। কই যাব, কি করব; কিছুই বুঝতেছি না।
সরকারি কোনো ভাতা পান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিধবা ভাতার কার্ড আছে। কিন্তু আট মাস ধরে ভাতা পাই না।
রহিমা খাতুন বলেন, কালাসোনার চরে ভালো ছিলাম। নিজের জমি ও গরু-ছাগল ছিল। সবকিছু নদী নিয়ে গেছে। এখন অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে কোনোমতো বেঁচে আছি।
রহিমার পাশে দাঁড়িয়ে বেগম বলেন, কালাসোনার চরে একখণ্ড জমি ছিল। এখন আমি ভূমিহীন। কেনার সামর্থ্য নেই। অন্যের কাজ করে বেঁচে আছি। দিনে ২০০ টাকা আয় দিয়ে সংসার চালাই।
নদীভাঙা মানুষের দুঃখ-দুর্দশার বিষয়ে ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু রায়হান দোলন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর কালাসোনার চর ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ ভূমিহীন হন। উড়িয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে কালাসোনার চরের কিছু মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে তাদের খোঁজখবর রাখি। পর্যায়ক্রমে তাদের সরকারি বিভিন্ন ভাতার আওতায় আনা হবে।
এএম