সেই ৮০ বছরের গামছা বিক্রেতা বৃদ্ধের পাশে একদল তরুণ

Dhaka Post Desk

জেলা প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া 

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:২৫ এএম


সেই ৮০ বছরের গামছা বিক্রেতা বৃদ্ধের পাশে একদল তরুণ

কুষ্টিয়ার সেই ৮০ বছর বয়সের বৃদ্ধ গামছা বিক্রেতা মোকাদ্দেস আলীর পাশে দাঁড়িয়েছেন মানবসেবায় কাজ করা তরুণদের সংগঠন উই আর বাংলাদেশ (ওয়াব)। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের দহকুলা গ্রামের কারিগর পাড়ায় তার বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন সংগঠনটির সদস্যরা। এ সময় পরিবারটিকে আর্থিক সহযোগিতা করে তার বসত ঘর মেরামতের ব্যবস্থাও করে দেন তারা। 

মোকাদ্দেস আলী বয়সের ভারে ভালো করে হাঁটতেও পারেন না তিনি। তবুও জীবিকার তাগিদে কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন জায়গায় হেঁটে হেঁটে গামছা বিক্রি করেন। তার চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হলেও তার আত্মবিশ্বাস আর মনোবল অনেকের চেয়ে বেশি। তাই ভিক্ষা না করে গামছা বিক্রি করে সংসার চালান তিনি। মোকাদ্দেস আলীকে নিয়ে করা ‘আল্লাহর রহমতে ভালো আছি, ভিক্ষা না করে গামছা বেচি’ শিরোনামে গত ২৮ জানুয়ারি জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে খবরটি বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। 

জানা যায়, মোকাদ্দেস আলী কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের দহকুলা গ্রামের কারিগর পাড়ার মৃত খোদাবক্সের ছেলে। শহরের মানুষ তাকে গামছার ফেরিওয়ালা হিসেবেই চেনেন। ৫ ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের বাবা তিনি। ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হয়েছে, তারা তাদের সন্তানদের নিয়ে পৃথকভাবে বসবাস করেন। ছেলেরা সবাই দিনমজুর। তারা আলাদাভাবে বসবাস করেন। বৃদ্ধ মোকাদ্দেস তার ৭৭ বছর বয়সী অসুস্থ স্ত্রী রুবিয়া খাতুনকে নিয়ে আলাদাভাবে বসবাস করেন। রুবিয়া হার্টের অসুখসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। 

প্রতিবেদনটি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ওয়াবের তরুণ সদস্যদের। তারা বলেন, বৃদ্ধ বয়সে গামছা বিক্রি করছে। এমন খবর দেখে খুব মায়া হয়। এই বয়সে চাচা ভিক্ষা না করে গামছা বিক্রি করছে এই বিষয়টা আমাদের দারুণভাবে প্রভাবিত করে। কিন্ত তখনও আমরা চাচার পরিচয় নিশ্চিত হইনি। এরপর একজন স্বেচ্ছাসেবক চাচার পরিচয় নিশ্চিত করেন। এরপর চাচার বাড়িতে উপস্থিত হই। এ সময়ে উই আর বাংলাদেশ (ওয়াব) গ্রুপের এডমিন ও পুলিশ কর্মকর্তা কবিরুল সাগর, ওয়াব গ্রুপের স্বেচ্ছাসেবক হুমায়ন কবির, হাসিবুল হাসান, সজীব হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

তারা আরও বলেন, চাচাকে ১৫ হাজার টাকা মূল্যমানের প্রায় ২০০টি গামছা ও লুঙ্গি কিনে দিয়েছি আমরা। এর মধ্যে প্রথম দিকে চাচাকে তিন হাজার টাকা দিয়েছিলাম গামছা উৎপাদনের জন্য সুতা কেনার জন্য। এছাড়া চাচার বাড়িতে ১৫টি মতো গামছা ছিল ওগুলো কিনে এনেছিলাম তাই চাচার ওইদিন আর বাইরে গিয়ে বিক্রি করতে হয়নি। 

ঘর মেরামত করে উনার বারান্দায় একটা রুম করে দেওয়া হয়েছে। জায়গাটা খোলা ছিল শীতে প্রচণ্ড কষ্ট পেত। এজন্য ২০ হাজার টাকা খরচ করে ঘরের বেড়া, দরজা জানালা একটা ফ্যান, বিদ্যুতের লাইন করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ভিক্ষাবৃত্তি নিষেধ করেছেন তাই এই বয়সে চাচার কাজ করা দেখে আমাদের ভালো লেগেছে। বৃদ্ধ চাচার কাজ করতে যাতে কষ্ট কম হয় এবং ব্যবসায়ে যেন একটু হলেও প্রসার ঘটে এজন্য তাকে সহযোগিতা করেছি। রাজবাড়ি এবং ফেসবুকভিত্তিক সামাজিক সংগঠন উই আর বাংলাদেশ (ওয়াব) গ্রুপের পক্ষ থেকে চাচাকে সহযোগিতা করা হয়েছে।

ওয়াবের প্রতিষ্ঠাতা ও পুলিশ সদস্য এসএম আকবর মুঠোফোনে বলেন, ওয়াব গ্রুপ প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমরা সারাদেশে এতিম, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও অসহায় মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, হুইলচেয়ার বিতরণ, গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ, অসহায় শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, রক্ত সংগ্রহসহ নানাবিধ সামাজিক ও মানবিক কাজ করে থাকি। ব্যবসায়ের প্রসার ও যাতে কষ্ট একটু কম হয় এজন্য বৃদ্ধ চাচাকে সহযোগিতা করেছি।

ওয়াবের এডমিন ও পুলিশ কর্মকর্তা কবিরুল সাগর বলেন, সুস্থ সবল মানুষ যেখানে কাজ না করে ভিক্ষা করেন সেখানে চাচা এতো বৃদ্ধ বয়সেও হেঁটে গামছা বিক্রি করে খাচ্ছেন। যেসকল বেকার মানুষ কর্ম করতে ভয় বা লজ্জা পান ৮০ বছর বয়স্ক মোকাবর চাচা তাদের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

রাজু আহমেদ/আরকে  

Link copied