বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে প্যাডেলের ঘানি টানা থেকে বাঁচলেন বৃদ্ধ

নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌর শহরের কমলপুর গ্রামের ৭২ বছরের দরিদ্র রিকশাচালক ইসলাম উদ্দিন। দীর্ঘদিন ধরে পায়ে তিনি প্যাডেল ঘুরিয়ে ভাঙা একটি রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বৃদ্ধ বয়সে পায়ে প্যাডেল ঘুরিয়ে ৯ সদস্যের সংসারের ঘানি টানার এ বিষয়টি সম্প্রতি নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনের নজরে আসে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (১৭ মার্চ) দুপুরে কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে বৃদ্ধ ইসলাম উদ্দিনের হাতে ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রিকশাটি হস্তান্তর করেন কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মইনউদ্দিন খন্দকার। এ সময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (কেন্দুয়া সার্কেল) জোনাঈদ আফ্রাদ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) খবিরুল আহসান উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মইনউদ্দিন খন্দকার বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে রিকশাচালক ইসলাম উদ্দিনের কথা জানতে পারেন জেলা প্রশাসক কাজি আব্দুর রহমান। পরে তিনি আমাকে এই রিকশাচালকের সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে তার বাড়িতে যেতে বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমি দুইবার ইসলাম উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের মানবেতর জীবনযাপনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জেলা প্রশাসককে অবহিত করি। পরে তিনি ইসলাম উদ্দিনকে ৫২ হাজার টাকা মূল্যের ব্যাটারিচালিত এ রিকশাটি প্রদান করেন।
ইউএনও বলেন, স্ত্রী ও চার মেয়ে, তিন ছেলেসহ নয় সদস্যের সংসার ইসলাম উদ্দিনের। বৃদ্ধ বয়সে তিনি পায়ে প্যাডেল ঘুরিয়ে পুরোনো রিকশা চালিয়ে সংসারের ভরণপোষণ করে আসছিলেন। আমরা প্রাথমিকভাবে তাকে একটি রিকশা দিয়েছি। তিনি এটা চালাতে না পারলে ভাড়া দিয়ে হলেও কিছু টাকা আয় করতে পারবেন। এছাড়া তার মেয়েদের বিয়ের সময়ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা এবং তাকে সরকারি ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
‘নতুন রিকশা পেয়ে আমি খুব খুশি। কারণ এত টাকা দিয়ে এ রকম রিকশা কেনার ক্ষমতা আমার নেই। আমি এক সময় বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে আইসক্রিম বিক্রি করতাম। এরপর শুরু করি পায়ে রিকশা চালানো।’
রিকশাচালক ইসলাম উদ্দিন
তিনি আরও বলেন, ‘বয়সের কারণে পায়ে রিকশা চালাতে খুব কষ্ট হয়। কিন্তু কী আর করব। ছেলেমেয়েদের খাবার জোগাড় করতে রিকশা যে আমাকে চালাতেই হয়। চার মেয়ে। এরমধ্যে দুই জনের বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। তাদের বিয়ে দেওয়ার মতো ক্ষমতাও আমার নেই। তিন ছেলের দুজন ছোট। আর বড় ছেলে ঢাকায় কাজ করে। ভালো একটা ঘরও নাই।’
প্রশাসনকে তিনি ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ‘আমার খবর নিতে ইউএনও স্যার আমার বাড়িতে দুইবার আসেন। ডিসি স্যার রিকশা দিছেন। মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার সময়ও সহযোগিতা করব তারা। একটা ঘরও দিব। এতে আমি খুব আনন্দিত।’
জিয়াউর রহমান/এমএসআর