‘ব্রিজ অইবো শুনতে শুনতে বুড়া হইয়া গেলাম’

‘জন্মের পর থেকেই শুনতাছি ব্রিজ হইবো। এইবার চেয়ারম্যানে ব্রিজ কইরা দিবো। এই কথা শুনতে শুনতে বুড়া হইয়া গেলাম। কিন্তু ব্রিজ হইল না।’ আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন সুফিয়ান মোল্লা (৭০)।
তিনি বলেন, নির্বাচন আসলে নদী মাপা শুরু হয়। দুই তিন লাখ টাকা খরচ করে নদী মাপে। নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে আর কারো খোঁজ পাওয়া যায় না, কেউ আসে না।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার আধরা ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষের সারা বছরই খেয়াপার করে আসতে হয় মূল ভূখণ্ডে। রজত রেখা নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন এই ইউনিয়নের মানুষদের পারাপারে সারাবছর খেয়াই একমাত্র ভরসা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সদর উপজেলার কালিরচর, সৈয়দপুর, বকচর, চর আব্দুল্লাহ গ্রামের মানুষের বাড়ি হতে বের হয়ে মূল ভূখণ্ডের সাথে যোগাযোগের একমাত্র বাহন হল খেয়া। রজতরেখা নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন এই এলাকার মানুষকে খেয়া দিয়ে আসতে হয় চিতলিয়া বাজার। বাজারে আসার পরে মূল ভূখণ্ডের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন তারা। চিতলিয়া বাজারের পাশে রজতেরেখা নদীতে গড়ে উঠেছে খেয়াঘাট। অর্ধশতাধিক ট্রলার ও নৌকা নিয়মিত যাতায়াত করে যাত্রীদের নিয়ে।
নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন সৈয়দপুর, বকচর, চর আব্দুল্লাহ গ্রামে রয়েছে খেয়া ঘাট। গ্রামগুলোর খেয়াঘাট হতে ট্রলারে নৌকায় করে চিতলিয়া ঘাট হয়ে যাতায়াত করতে হয়। বকচর হতে ১৫ টাকা, চর আব্দুল্লাহপুর, সৈয়দপুর হতে ১০ টাকা ভাড়ায় প্রতিদিন যাতায়াত করেন যাত্রীরা। বর্ষা আসলে নদীটি ৫০০ মিটারের অধিক আকার ধারণ করে তবে শীত মৌসুমি নদীটি শুকিয়ে অনেকটা ছোট হয়ে যায়।
সৈয়দপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীন পাইক (৭০) বলেন, ‘৪০ বছর ধরে শুনতাছি ব্রিজ হইবো। কিন্তু ব্রিজ তো হয় না। নির্বাচন আসলেই এমপিরা বলে ব্রিজ করে দিবো। তারপর আর খোঁজ থাকে না। তিনি আরও বলেন, সৈয়দপুর গ্রামে আমাদের ভোটার সংখ্যাই ১০ হাজার, সব মিলে আমাদের গ্রামের ২০ হাজার মানুষ জন্মের পর থেকে ট্রলারে পারাপার হচ্ছে। সারা বছরই ট্রলারে পার হচ্ছি। এখন বুড়া হয়ে গেছি মরণের আগে মনে হয় আর ব্রিজ দেইখা যাইতে পারমুনা।’
হরগঙ্গা কলেজের ছাত্র মো. রানা বলেন, সারা বছরে আমাদের এখানে খেয়া পার হয়ে পারাপার হতে হয়। রাত দশটার পরে খেয়া নৌকা থাকে না তখন আর গ্রাম থেকে বের হতে পারি না আমরা।
জাজিরা গ্রামের ট্রলার চালক মজিবর রহমান বলেন, চিতলিয়া খেয়া ঘাটে ৪০টি ট্রলার ও নৌকা আছে। আমরা প্রতিদিন নৌকা ও ট্রলার দিয়ে মানুষ পারাপার করে থাকি। বৃষ্টির দিনে আমাদের বেশ ঝামেলা হয় মানুষ পারাপার করতে। বৃষ্টি নামলে পলিথিন মুড়ি দিয়ে পারাপার করতে হয়।
আধারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে অনেক বড় ব্রীজ প্রয়োজন। যা নির্মাণ করতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। আমরা চেষ্টা করছি কিন্তু অনেক টাকার প্রয়োজন বিধায় এখানে ব্রিজের কাজটি সেভাবে আগাচ্ছে না।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মো. আল-জুনায়েত বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনার মুখে প্রথম শুনলাম। তারপরেও আমি খোঁজ নিব।
ব.ম শামীম/এএএ