ইউটিউব দেখে ননী ফল ও করোসল চাষ করছেন মুন্সীগঞ্জের এশারুল

পদ্মা নদীর ভাঙনে সর্বস্ব হারানো এশারুল মল্লিক নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ছয় বছর আগে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। পাঁচ বছর সেখানে অবস্থানের পর তার কানের মধ্যে টিউমার হয়। দিন দিন তা বড় হয়ে ব্যাপক যন্ত্রণার উদ্ভব হলে তিনি মালয়েশিয়ায় ডাক্তার দেখান। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানতে পারেন তিনি ক্যানসার আক্রান্ত।
চিন্তায় পড়ে যান এশারুল। পরে ইউটিউব দেখতে শুরু করেন, কীভাবে ক্যানসার হতে মুক্ত হওয়া যায়। পরে তিনি আফ্রিকান ননী ফলের সন্ধান পান। তিনি মালয়েশিয়ায় থাকতে ওই ফল খেতে শুরু করেন। ওই ফল খাওয়ার পর তার কানের ব্যথা কমতে থাকে। গত এক বছর আগে তিনি দেশে ফিরে আসেন। আসার সময় তিনি মালয়েশিয়া থেকে ননী ফলের কিছু বীজ ও আরেক ক্যানসার নির্মূলকারী হিসেবে পরিচিত করোসল গাছের ১৫টি চারা নিয়ে আসেন। ইতোমধ্যে ননী ফলের গাছগুলোতে ফল আসতে শুরু করেছে। এছাড়া ১৫টি করোসল গাছের চারার মধ্যে ১২টি বেঁচে আছে এবং গাছগুলোও বেশ বড় হয়েছে। আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে করোসল গাছে ফল আসবে বলে জানান এশারুল।
সরেজমিনে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর বৈখর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এশারুল মল্লিক বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত ১৪ শতাংশ জমিতে আবাদ করছেন। তার বাগানে এখন ৩৫টি ননী ফলের গাছ রয়েছে। যেগুলোর অধিকাংশ গাছেই ফল আসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তিনি ননী ফল বিক্রিও করতে শুরু করেছেন।
এ ব্যাপারে ওই এলাকার নাজির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এশারুল মল্লিক এলাকায় ননী ফল নামের নতুন ফল উৎপাদন করছেন। বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আমি নিজেও এই ফল খেয়েছি। ফলটি খুব সুস্বাদু না তবে ইউটিউবে দেখলাম এই ফলটি ক্যানসার, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে সাহায্য করে। তাই আমি নিজে এ ফল খাচ্ছি। এ ফল প্রতি কেজি ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন এশারুল মল্লিক।
এ ব্যাপারে এশারুল মল্লিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছয় বছর আগে আমি মালয়েশিয়া যাই। সেখানে পাঁচ বছর কাজ করার পর আমার টিউমার ক্যানসার ধরা পড়ে। ডাক্তার আমাকে অস্ত্রোপচার করতে বললে আমি কীভাবে অস্ত্রোপচার না করে ভালো থাকা যায় সেই সন্ধান করতে থাকি। পরে আমি ইউটিউবে ননী ফলের সন্ধান পাই। এই ফল খাওয়ার পর আমার ব্যথা কমতে শুরু করে। আমি দীর্ঘসময় ধরে এ ফল খেয়ে এখন ভালো আছি। আমার কানের মধ্যে টিউমারটি এখন অনেক ছোট হয়ে নির্মূল হয়ে আসছে। আমার বাগানে এখন ৩৫টি ননী ফলের গাছ আছে। আমি এগুলো গত বছর ফাল্গুন মাসে মালয়েশিয়া থেকে বীজ নিয়ে এসে রোপণ করেছিলাম। অধিকাংশ গাছে এখন ফল আসতে শুরু করেছে। সারা বছরই এই গাছে ফল উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে শীতের মধ্যে কিছুটা কম হয়। গ্রীষ্মকালে বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে করোসল গাছ। সেই করোসল গাছের ১৫টি চারা মালয়েশিয়া থেকে নিয়ে এসেছি। ওই চারাগুলোর মধ্যে ১২টি চারা বেঁচে আছে। ওগুলোতে এখনো ফল আসেনি তবে আরও দুই বছর পরে ফল আসবে।
মুন্সীগঞ্জ কৃষি অফিসের উপপরিচালক ড. মো. আব্দুল আজিজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোসল গাছ ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে এটা আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। তবে ননী ফল সম্পর্কে আমার ধারণা নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জনঞ্জু মরুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে আপনি আমাদের আয়ুর্বেদিক ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক বিদ্যুতের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ সম্পর্কে আমার সুষ্পষ্ট ধারণা নেই। আমি বিষয়টি জেনে আপনাকে পরে জানাব।
ব.ম শামীম/এমজেইউ