সবার সহযোগিতা চান আবদুস ছামাদ

‘যে টাকা ছিল, তা দিয়া এখন পর্যন্ত চিকিৎসা করাইছি। নিজের জমিজমা নাই। সংসারে সচ্ছলতার জন্য একমাত্র ছেলেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরব পাঠিয়েছিলাম। সেও দেশে ফিরে আসে। বয়সের ভারে নিজে এখন আর ভারী কাজ করতে পারি না। স্ত্রীর উন্নত চিকিৎসা তো দূরে থাক, সরকারি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যে তার চিকিৎসা করাব, সেই সক্ষমতাও নেই আমার। টাকা নাই, কেমনে স্ত্রীর চিকিৎসা করাব।’
এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথাগুলো বলছিলেন মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বড় শরুন্ডী এলাকার আবদুস ছামাদ।
পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদ তিতুমীর স্কুলে দীর্ঘ ১৬ বছর স্কুলভ্যান চালিয়েছেন তিনি। সেই উপার্জন দিয়েই সংসার চালাতেন তিনি। এরপর মানিকগঞ্জ জেলা শহরের ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১২ বছর অফিস সহায়ক হিসেবে কাজ করেছেন। তারপর হলি ফ্লাওয়ার স্কুলে প্রায় সাত বছর স্কুল ভ্যান চালিয়েছেন।
এসব কাজ করেই দুই মেয়ে ও এক ছেলের বিয়েও দিয়েছেন এবং ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছিলেন আবদুস ছামাদ। কিন্তু বয়সের ভারে এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারেন না। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল ছামাদের। এক বছর আগে হঠাৎ মরণব্যাধি ক্যানসার হানা দেয় তার পরিবারে। ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হন তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৬০)।
সরেজমিনে ছামাদের বাড়িতে দেখা যায়, তার (ছামাদ) স্ত্রী সুফিয়া বেগম ছানায় শুয়ে আছেন। তাকে দেখতে আত্মীয়স্বজন এসেছেন। বিছনার দুই পাশে বসে তারা কথা বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সুফিয়া বেগম বিছানায় অচেতন শুয়ে আছেন। মাঝেমধ্যে ব্যথার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেয়ে চিৎকার করে উঠছেন।
ছামাদের ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংসারে সচ্ছলতা ফেরানোর জন্য সৌদি আরবে মাজরা (কৃষি) ভিসায় পাড়ি জামান তিনি। এতে তার খরচ হয় ৫ লাখ টাকা। কোম্পানির অবস্থা খারাপ হলে দেশে ফিরে আসেন। ওই তিন বছরে খরচের টাকাও তুলতে পারেননি। দেশে ফিরে আসার পর থেকে কাজের সন্ধান করে যাচ্ছেন। তবে কিছুতেই কোনো কাজের ব্যবস্থা হচ্ছে না। এদিকে তার মা অসুস্থ হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। মায়ের কষ্টও সহ্য হচ্ছে না। টাকার অভাবে মায়ের ভালো চিকিৎসাও করাতে পারছেন না।
তিনি বলেন, মায়ের চিকিৎসা করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। এত টাকা তো আমাগো নাই। ক্যাশ টাকা যা ছিল তা দিয়ে এত দিন চিকিৎসা করাইছি। মায়ের চিকিৎসার জন্য সমাজের ধনী ব্যক্তি ও সরকারের সহযোগিতা কমনা করছি।
আবদুস ছামাদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এক বছর ধরে তার স্ত্রী ক্যানসারে অসুস্থ। নিজের সাধ্য অনুযায়ী চিকিৎসা করিয়েছেন। স্ত্রীর চিকিৎসা করানোর জন্য আত্মীয়স্বজনরাও কিছু সহযোগিতা করেছেন। তবে সেটা যতেষ্ট নয়। এখন পর্যন্ত স্ত্রীর চিকিৎসার পেছনে খরচ করেছেন দেড় লাখ টাকার বেশি। তিনি বলেন, নিজের সাড়ে চার শতকের একটি বাড়ি আছে। আর একটা গরু আছে। সম্পদ বলতে এতটুকুই। দুই শতক কৃষিজমিও যদি থাকত, তাহলে বিক্রি করে স্ত্রীর উন্নত চিকিৎসা করাইতাম।
তিনি বলেন, ব্রেস্ট ক্যানসারের চিকিৎসার করানোর পরে স্ত্রী কিছুটা সুস্থ হয়েছিল। কয়েক মাস আগে তার অবস্থার কিছুটা অবনতি হলে আবারও হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার জরায়ুতেও ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তবে মাসখানেক ধরে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। নিজে কাজও করতে পারি না, টাকাও কামাই করতে পারি না। এখন টাকার অভাবে স্ত্রীর উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছি না। সমাজের ধনাঢ্য ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের কাছে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন আবদুস ছামাদ।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা লাভলী খানম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারিভাবে ক্যানসার, হৃদরোগে আক্রান্তসহ বিরল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে কোনো রোগী আবেদন করলে যাছাই-বাছাই করে এই সহযোগিতা করা হয়। সুফিয়া বেগমের বিষয়েও তার স্বজনরা পৌরসভা সমাজসেবা অফিসে আবেদন করলে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবেন বলে জানান তিনি।
সুফিয়া বেগমকে কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে তার ছেলে মো. আনোয়ার হোসেনের মোবাইল নম্বরে (০১৮৮৮৭০৯৯৫৬) যোগাযোগ করতে পারেন।
এনএ