সবার ভালোবাসা পেলেন অর্ধাহারে থাকা বাউল সুকুমার

করোনায় ভালো নেই ‘বলব না গো আর কোনো দিন, ভালোবাসো তুমি মোরে’খ্যাত বাউল সুকুমার রায় (৬৭)। এমন খবর পেয়ে তার পাশে দাঁড়ালেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার। এ ছাড়া বাউল সুকুমারের পাশে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রবাসী, স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ আরও অনেকে।
মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে বাউল সুকুমারকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার ২৫ হাজার টাকা অর্থসহায়তা প্রদান করেন তাকে।
বগুড়া শহরের জয়পুরপাড়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন কার্যালয়ে পিবিআই বগুড়ার পুলিশ সুপার আকরামুল হোসেন এই নগদ অর্থ বাউল সুকুমারের কাছে হস্তান্তর করেন।
অর্থ পাওয়ার পর উপস্থিত সবাইকে ‘বলব না গো আর কোন দিন ভালোবাসো তুমি মোরে’ গান গেয়ে শোনান বাউল সুকুমার রায়। নগদ অর্থ পেয়ে আনন্দিত হয়ে তিনি বলেন, করোনায় চলছে জীবন কোনোভাবে। গান গেয়ে আত্মার সাধন হয় কিন্তু পেটের ডাক না শুনলে আত্মাকে ভালো রাখা যায় না।
তিনি বলেন, অর্ধাহারে চলছিলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। যারা আমার এই দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়েছে, আমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। মানুষ আমার গান ভালোবাসে, আমি আজীবন গান গেয়ে মানুষের ভালোবাসা পেতে চাই। সবাই আমাকে ভালোবাসে। আমারও সবার জন্য ভালোবাসা। সবাইকে আমার সালাম।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার আকরামুল হোসেন বলেন, ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার স্যার বাউল সুকুমারের খোঁজ নিয়ে তার জন্য অর্থ পাঠিয়েছেন। ডিআইজি স্যার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এই ২৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন এবং তা সুকুমারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পিবিআই পুলিশ বিভাগ গঠনের পর থেকে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে বাউল সুকুমারের পাশে দাঁড়িয়েছেন আমাদের ডিআইজি স্যার। ভবিষ্যতে তার পাশে থাকবেন পিবিআইয়ের সদস্যরা বলেও জানান তিনি।
এ সময় পিবিআই বগুড়ার পুলিশ পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম, জাহিদ হোসেন, জামাল উদ্দিন, উপপরিদর্শক মুনসুর আলী, নাহিদ হোসেন, আলী হাসান তুষারসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বাউল সুকুমারকে এসিআই মটরসের সহযোগিতায় ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব বগুড়ার পক্ষ থেকে সদস্যরা অনুদান প্রদান করেন। মঙ্গলবার বেলা ২টায় এসিআই মটরস বগুড়া শহরের জয়পুরপাড়া কার্যালয়ে তার হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেন।
এ সময় ইয়ামাহার বগুড়ার ডিলার আবদুল মোত্তালিব মানিক, এসিআই মটরসের মার্কেটিং অফিসার হাবিবুল্লাহ মেসবাহ্, টিএমএস উত্তম কুমার দেসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরে প্রকৌশলী পদে কর্মরত একজন বন্ধুর মাধ্যমে হংকং থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী সুকুমার বাউলের জন্য গত রোববার ২০ হাজার টাকা অর্থ সহযোগিতা পাঠিয়েছেন। এ ছাড়া বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুরের ধারার পক্ষ থেকে সুকুমারকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা পাঠানো হয়েছে।
সুকুমার বাউল জানান, এবারও করোনাকালে ভালো নেই শুনে সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন সোমবার সকালে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামে সুকুমার বাউলের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন। এ সময় তার হাতে ভালোবাসার ডালাভর্তি খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন। তাতে ছিল ৫০ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, ২ কেজি মসুর ডাল, ৫ লিটার সয়াবিন তেল, ৫ কেজি পেঁয়াজ, ২ কেজি চিনি, ২ কেজি লবণ, ৩০টি ডিম এবং নগদ এক হাজার টাকা তুলে দেন।
সাখাওয়াত হোসেন জনি/এনএ