জমি কিনে দিনমজুরকে পাকা বাড়ি করে দিচ্ছেন এক সাংবাদিক

ফারুক মিয়া একজন ভূমিহীন দিনমজুর। ৮০ বছরের বৃদ্ধা মাসহ তার ১০ জনের সংসার। নিজের কোনো জায়গা না থাকায় প্রায় ১০ বছর ধরে হবিগঞ্জ-লাখাই সড়কের লংলা ব্রিজের পাশে সরকারি জায়গায় ছোট একটি ঘর তৈরি করে কোনো রকম জীপন যাপন করে আসছেন।
গেল বছর হবিগঞ্জ-লাখাই সড়কের প্রসস্তকরণের কাজ শুরু হলে তার বর্তমান ঘরটি রাস্তার পার্শ্বে হওয়ার কারণে ঘরটি ভেঙে ফেলার জন্য সড়ক ও জনপদ বিভাগ বার বার তাগাদ দিচ্ছে। কিন্ত বিকল্প কোনো পথ না থাকার কারণে তিনি ঘরটি ভাঙতে সাহস পাচ্ছেন না। এ চিন্তায় যখন অস্থির তখন তার পাশে দাঁড়িয়েছেন হবিগঞ্জের সাংবাদিক সায়েদুজ্জামান জাহির।
তিনি একটি বেসকারি টেলিভিশনের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তার মাধ্যমে দরিদ্র অসহায় ফারুক মিয়া এখন পাকা ঘরের স্বপ্ন দেখছেন। ইতোমধ্যে জায়গা ক্রয় করে কাজও শুরু হয়ে গেছে। চলছে নির্মাণ কাজ। সাংবাদিক সায়েদুজ্জামান জাহিরের উদ্যোগে ইতোমধ্যে পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রবাসে থাকা তার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবরা।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রিচি গ্রামের দরিদ্র ফারুক মিয়া জানান, প্রায় ১০ বছর পূর্বে আমার জায়গা সম্পত্তি অভাব অনটনের কারণে বিক্রি করে দিয়েছি। জায়গা বিক্রি করে দেয়ার পর সড়কের পাশে সরকারি জায়গায় একটি কুঁড়েঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করি। বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, ৪ ছেলে-২ মেয়ে নিয়ে প্রায় ১০ জনের সংসার। আমার কোনো জায়গা জমি নেই। মানুষের জমি বর্গাচাষ করে কোনো রকম জীবন চলে।
তিনি বলেন, এখন বৃষ্টি এলে ঘরে থাকা যায় না, এমনকি রাতে বৃষ্টি হলে ঘুম থেকে উঠে সবাই বসে থাকি। বৃষ্টি সারা ঘরে পড়ে। আমার অসহায়ত্বের কথা সাংবাদিক জাহির সাহেব দেখে তিনি বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে একটি পাকা ঘর তৈরিতে হাত দিয়েছেন। এখন স্বপ্ন দেখছি পাকা ঘরের।
হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সায়েদুজ্জামান জাহির জানান, অসহায় ফারুক মিয়া আমার এক সময়ের প্রতিবেশী ছিলেন। আমি একদিন তার ঘরে বৃষ্টির সময় গিয়েছিলাম। তখন দেখতে পেলাম সারা ঘরে বষ্টি পড়ে। কোনো অবস্থা নেই থাকার মত। মানুষ ও গবাদি পশু এক সঙ্গে বাস করে। বিষয়টি আমি দেখে প্রথমে আমার প্রবাসী আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি পাকা ঘর তৈরিকে হাত দিয়েছি।
তিনি বলেন, প্রায় সাড়ে ৫ লাখ ব্যয়ে ৮ শতক জায়গার ওপর একটি পাকা ঘর তৈরি করা হচ্ছে। যে ঘরে ৩টি বেডরুম, ২টি মিনি বেডরুম, ২টি বাথরুম, ১টি কিচেন ও বারান্দা থাকবে।
সায়েদুজ্জামান জাহির আরো বলেন, আমি উদ্যোগ নেয়ার পর আমার আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও অনেকেই এগিয়ে আসছেন। আশা করি আগামী দুই মাসের মধ্যেই ঘরটির কাজ সম্পূর্ণ শেষ করা যাবে। ফারুক মিয়াকে দেয়া যাবে একটি পাকা ঘর।
তিনি বলেন, সমাজের অসহায়দের জন্য এভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে সমাজের গরিব অসহায়রা কিছুটা হলেও শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাচ্ছিরুল ইসলাম জানান, অসহায়দের পাশে এভাবে সমাজের ভিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। আমিও ইতোমধ্যে অনেক অসহায়ের পাশে দাঁড়িয়েছি। ফারুক মিয়ার বেলায়ও সরকারিভাবে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন এ জনপ্রতিনিধি।
মোহাম্মদ নূর উদ্দিন/এমএএস