আ. লীগ নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, বিএনপি নেতাকর্মীসহ কারাগারে ৬

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বরগুনায় এক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীসহ ছয়জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। অভিযুক্তরা আদালতে স্থায়ী জামিন আবেদন করলেও তা নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে বরগুনার দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক এস. এম. শরিয়ত উল্লাহ এ আদেশ দেন। বরগুনার দ্রুত বিচার আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) ইসরাত হোসেন সুমন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বরগুনা সদর উপজেলার ৯ নম্বর এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি ও স্থানীয় ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। সেদিন তার দোকানে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরে ওই বছরের ২৫ আগস্ট মনিরুজ্জামানের স্ত্রী মোসা. মুন্নী বাদী হয়ে ২২ জনকে অভিযুক্ত করে বরগুনার দ্রুত বিচার আদালতে মামলা করেন।
কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন- এম বালিয়াতলী ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মিল্টন (৪৪), যুবদল নেতা মো. জামাল মল্লিক (৪৫), ওই ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সোলায়মান কবির ইউনুস (৪৬), জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক মিলন (৪৫), ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব আকতারুল হক (৪৫) এবং শিক্ষক মো. মন্টু মল্লিক (৫০)।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, মামলার বাদী মোসা. মুন্নীর স্বামী মনিরুজ্জামান এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের মাইঠা এলাকায় একটি স্থানীয় বাজারে সার, কিটনাশকসহ বিভিন্ন ধরনের বীজ পাইকারী ও খুচরা বিক্রির ব্যবসা করতেন। পাশাপাশি তিনি মোবাইলের সিম, রিচার্জ এবং বিকাশ এজেন্টের কাজ করতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর রাত ৮টার দিকে প্রায় দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে রামদা, ছেনা, লোহার রড, বাঁশের লাঠিসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অভিযুক্তরা মনিরুজ্জামানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসেন। তারা মনিরুজ্জামানকে চাঁদার দাবিতে হুমকি দেন, কিন্তু তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন। এরপর অস্ত্রের মুখে মনিরুজ্জামান ও তার ছেলেকে মারধর করে বিভিন্ন মালামাল ও নগদ টাকা লুটপাট করেন তারা।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্তরা দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি ভাঙচুর করেন এবং পেট্রোল দিয়ে আগুন দিয়ে সেটি পুড়িয়ে দেন। মামলার পর আসামিরা অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে ছিলেন। আদালতে স্থায়ী জামিনের আবেদন করলে তা বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়।
আরও পড়ুন
আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুল ওয়াসী মতিন বলেন, মনিরুজ্জামান তৎকালীন আওয়ামী লীগের সময় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছেন এবং তাদের একাধিকবার জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন। মনিরুজ্জামান ওই ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং আসামিদের সঙ্গে তার বিরোধ রয়েছে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এলাকাবাসী খুশি হয়ে তার দোকানে ভাঙচুর করেছে, অভিযুক্তরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তারা আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে জেলা দায়রা ও জজ আদালতে আবেদন করবেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বরগুনার দ্রুত বিচার আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) ইসরাত হোসেন সুমন বলেন, ৫ আগস্টের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার শুনানিতে আসামিদের জামিন দেয়া হয়। পরে স্থায়ী জামিনের জন্য আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়।
আব্দুল আলীম/এআরবি