শিক্ষক চাষাবাদ নিয়ে ব্যস্ত, শিক্ষার্থীরা গুলতি হাতে পাখি শিকারে!

বান্দরবানের দুর্গম রুমা উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অনুপস্থিতিসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ৩নং রেমাইক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে অবস্থিত দুলাচান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান নিয়ে ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকসহ ৬ জন রয়েছে। তবে শিক্ষকরা এক সঙ্গে বিদ্যালয়ে আসেন না। তারা পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন।
আরও জানা গেছে, ইউএনডিপি পরিচালিত জাতীয়করণপ্রাপ্ত এই বিদ্যালয়টিতে মোট ৬ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। তবে মাসে সর্বোচ্চ ২ জন শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন। এতে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে পাঠদানের সময় নেমে এসেছে ১ ঘণ্টায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শিক্ষাগ্রহণ হয় না বললেই চলে।
স্থানীয়রা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের পাড়ার স্কুলে প্রায়ই নতুন নতুন মুখ দেখা যায়। ভাবতাম সরকার নতুন শিক্ষক দিয়েছে। পরে বুঝলাম, ৬ জন শিক্ষক থাকার পরেও মাসে এক থেকে দুইবার উনারা স্কুলে আসেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষকরা মাস শেষে বাড়িতে বসেই বেতন তোলেন। মাসে ৭ দিনও আসেন না, আর এলেও ক্লাস হয় মাত্র ১ ঘণ্টা।
সরজমিনে স্কুলটি পরিদর্শনে দেখা যায়, দুলাচান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বন্ধ। বিদ্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলছে। যে সময় বই-খাতা হাতে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে থাকার কথা, সেখানে দেখা গেল তারা পাশের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কেউবা হাতে গুলতি নিয়ে পাখি শিকারে মেতেছে।

স্কুলের সহকারী শিক্ষক বামেচিং মারমা বলেন, দৈনিকভাবে স্কুলে যাওয়া–আসা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ছয়জন শিক্ষক পালাক্রমে পাঠদান করি। শিক্ষা অফিসারও বিষয়টি জানেন। হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা মাস শেষে একসঙ্গে হাজিরা খাতায় দৈনিক উপস্থিতির স্বাক্ষর দেই।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মংপাও ম্রোর বিষয়ে পাড়াবাসীদের অভিযোগ, তিনি নিজ পাড়ায় অবস্থান করলেও নিয়মিত বিদ্যালয়ে পাঠদান করেন না। বরং অধিকাংশ সময় ব্যয় করেন জুমচাষ ও বাগানের কাজে। স্থানীয়দের অভিযোগ, তিনি অধিক সময় কৃষিকাজে ব্যয় করেন। এতে আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মংপাও ম্রোর মোবাইলে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
স্কুলপড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মেন ওয়াই ম্রো বলেন, আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের অনেক স্বপ্ন নিয়ে স্কুলে ভর্তি করেছি। স্কুলে ঠিক সময়ে শিক্ষকরা না আসলে আমাদের সন্তানদের পড়ালেখা কিভাবে করবে? এটাই আমাদের দুঃশ্চিতার বিষয়। আমরা আমাদের সন্তানদের পড়ালেখা ঠিকভাবে করাতে চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, স্কুলের ক্লাস ঠিকমতো হয় না। আজকে স্কুলে আসছি, স্যাররা আসেননি। তাই আমরা খেলাধুলা করছি।
উপজেলার এই স্কুলটির অনিয়মের বিষয়ে, উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পরিনম চাকমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি জানতাম না। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দাপ্তরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এদিকে পাড়াবাসীরা দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে স্কুলের অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
শহীদুল ইসলাম/আরকে