অনিতার দুঃখে মন গলেনি কারো

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ভেঙে গেছে স্বামীর রেখে যাওয়া একমাত্র কাঁচা ঘরটি। সেটি আজও মেরামত করতে পারেননি স্ত্রী অনিতা দেবনাথ। ভাঙা ঘরের ওপর একচালা টিন দিয়েই এক বছর ধরে বসবাস করছেন তিনি। কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করলেও ঘর মেরামতে এগিয়ে আসেননি কেউ।
অনিতা দেবনাথ সাতক্ষীরার তালা সদর ইউনিয়নের জেয়ালানলতা গ্রামের মৃত. সুকুমার দেবনাথের স্ত্রী।
অনিতা দেবনাথ ঢাকা পোস্টকে বলেন, চার বছর আগে স্বামী মারা গেছে। ভিটেবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। দুই ছেলে ও এক মেয়ে তার। ২০ বছর আগে বড় ছেলে গনেশ দেবনাথ বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে যায়। তারপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ করেনি। কি করে আমি আজও জানি না। বেঁচে আছি না মারা গেছি, কোনো খোঁজ নেয় না। মেঝ মেয়েটার ডুমুরিয়ায় বিয়ে হয়েছে। সে সেখানে স্বামীর বাড়িতে থাকে। ছোট ছেলে শ্যাম দেবনাথের বয়স ১৫ বছর। এখনো কোনো কাজ করতে পারে না।
অনিতা দেবনাথ আরও বলেন, আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে যেটুকু রোজগার করি সেটুকুতেই সংসার চলে। সবদিন মুখে খাবার জোটে না। চেয়ারম্যান-মেম্বার আজ পর্যন্ত কোনো সহযোগিতাও করেনি। আমার দুঃখ দেখে কারো মন গলে না। একটা ভাতার কার্ডও হলো না। আম্ফান ঝড়ের সময় ঘরটি ভেঙে যায়। এরপর থেকে খুব কষ্টে আছি। একটু বৃষ্টি হলে থাকা যায় না। একচালা টিনের ছাউনি দিয়ে বসবাস করছি। মেরামত করার মতো সামর্থ্য আমার নেই। ইউএনও স্যারের কাছে গিয়েছিলাম। ভোটার আইডি কার্ড জমা দিয়ে এসেছি। আপনারা আমার ঘরটি মেরামতের ব্যবস্থা করে দিলে বৃষ্টিতে আর ভিজতে হবে না।
অনিতা দেবনাথের প্রতিবেশী মাসুদ পারভেজ মোড়ল জানান, ঘরটি ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। চেয়ারম্যান-মেম্বার কোনো সরকারি সহায়তা দেয় না। গরিবের পাশে কেউ থাকে না। ঘরটি মেরামত করার সামর্থ্য নেই তার। একটি ছেলে রয়েছে সঙ্গে, সেও ছোট এখনো। কোনো কাজ ঠিকমতো করতে পারে না। আপনাদের মাধ্যমে সরকারের কাছে এই অসহায় মানুষটির জন্য একটি ঘরের দাবি করছি।
তালা সদর ইউনিয়নের ৩ নং জেয়ালানলতা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ নিকারী বলেন, অনিতাকে কোনো সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়নি। তার মতো গরিব মানুষ এলাকায় অনেক আছে।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিফ-উল-হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনিতা দেবনাথ আমার কাছে এসেছিলেন। দুই দিন আগে তাকে ত্রাণসহায়তা দিয়েছি। নতুন ঘর পেতে একটু সময় লাগবে। তবে ভাঙাচোরা ঘরটি সংস্কারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে টিন ও নগদ তিন হাজার টাকা বরাদ্দ করে দিচ্ছি।
আকরামুল ইসলাম/এসপি