ঋণ নিয়ে সংসার চলছে মহালছড়ির জেলেদের
প্রজনন মৌসুম হওয়ায় সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কাপ্তাই লেকে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। ফলে খাগড়াছড়ির মহালছড়ির জেলেদের দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। অনেকেই আবার ঋণ নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। তাদের দুর্ভোগ দেখার যেন কেউ নেই।
জানা গেছে, মহালছড়িতে লেকে জাল দিয়ে মাছ ধরে এমন জেলে রয়েছে ১৬০০। তাদের প্রজনন মৌসুমে প্রতি মাসে সরকার থেকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। কিন্তু এ চাল তাদের সংসার চালানো সম্ভব হয় না। অনেকের পরিবারে এক মাসে চাল লাগে ৮০ থেকে ১০০ কেজি।
সরকার ঘোষিত মে থেকে জুলাই পর্যন্ত তিন মাসের মাছ ধরা বন্ধ থাকলেও প্রাকৃতিক কারণে বৃষ্টি কম হওয়ায় লেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি হয়নি। পরে আরও এক মাস মাছ ধরা বন্ধ ঘোষণা করে। এ সময় তাদের কোনো ত্রাণ দেওয়া হয়নি। ফলে তাদের মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে সুদের ওপর টাকা নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। মাছ ধরা শুরু হলে তা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করবেন।
মহালছড়ির জেলে মো. মতিন বলেন, মাছ ধরার ওপর সংসার চালানো নির্ভর করে। সরকারিভাবে মাছ ধরা বন্ধ ঘোষণা করার পর থেকে আমাদের জীবন কষ্টে চলছে। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে।
অন্যদের থেকে জাল ভাড়া নিয়ে মাছ ধরা মো. বেলাল হোসেন বলেন, যখন মাছ ধরার সময় থাকে তখন আমি অন্যদের কাছ থেকে জাল ভাড়া নিয়ে মাছ ধরে অর্জিত অর্থ দিয়ে পরিবার চালাই। বর্তমানে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় কোনো আয় নেই। অনেক কষ্টে জীবন চালাতে হচ্ছে। এই বন্ধের সময় প্রায় ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। মাছ ধরা শুরু হলে ঋণ পরিশোধ করব।
জেলে মো. খোকন বলেন, মাছ ধরা বন্ধ হওয়ার পর প্রতি মাসে ২০ কেজি করে তিন মাসে ৬০ কেজি চাল পেয়েছি। শুধু চাল দিয়ে তো সংসার চলে না। বাকি জিনিসগুলো কিনতে অনেক টাকার দরকার হয়। সেটা কই পাব? বাধ্য হয়ে ঋণ নিয়ে চলতে হচ্ছে। এ ছাড়া কেউ আমাদের সহযোগিতা করে না। নিজের কষ্ট নিজেকেই হজম করতে হয়।
মহালছড়ি মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. ফরিদ বলেন, প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জেলেরা বেকার হয়ে পড়েন। এ সময় প্রতি পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। এতে তাদের কিছুই হয় না। সরকার যদি এই সময়টাতে জেলেদের অনুদান দিত তাহলে তারা তাদের চাহিদামতো চলতে পারত।
মহালছড়ি কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের প্রধান মো. নাসরুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রজননের সময় মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জেলেরা বেকার হয়ে পড়েন। এ সময় তাদের প্রতি মাসে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। অনিবার্য কারণবশত আরও এক মাস নিষেধাজ্ঞার সময় বাড়ানো হয়েছে। তবে এ সময়ের জন্য তাদের কোনো চাল দেওয়া হয়নি। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে আরেকটু বরাদ্দ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছি।
জাফর সবুজ/এসপি