বিলুপ্তির পথে জোড়বাংলা মন্দির

সংরক্ষণের অভাবে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির জামালপুরের নলিয়া গ্রামের জোড়বাংলা মন্দির। ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে জোড়বাংলা মন্দিরগুলো। এক সময়ের জোড়বাংলা মন্দিরকে কেন্দ্র করে অপরূপ সাজে এখানে ৮টি মন্দির ছিল।
কিন্তু কালের আর্বতনে সেখানে এখন মাত্র ৩টি মন্দির রয়েছে। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে যে তিনটি মন্দির রয়েছে সেগুলোও নেই প্রশাসনের নজরদারিতে। এসব মন্দিরগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
জানা যায়, ১৬৫৫ সালে রাজা সীতারাম রায় বর্তমান রাজবাড়ীর কালুখালীর বেলগাছিতে তার ইচ্ছা অনুসারে একটি সোনার মূর্তি দিয়ে দুর্গাপূজা করতে চেয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মন্দিরের মূর্তি তৈরি করার জন্য নলিয়া গ্রামের এক কর্মকারকে মূর্তি বানানোর নির্দেশ প্রদান করেন। মূর্তি তৈরির জন্য সেই কর্মকার রাজা সীতারাম রায়ের কাছে স্বর্ণ চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে রাজা সীতারাম রায় কর্মকারকে স্বর্ণ চুরি করবে বলে তাকে তার বাড়িতে গিয়ে মূর্তি বানাতে বলে।
কর্মকার মনের কষ্টে তখন রাজার বাড়িতে গিয়ে সোনার মূর্তির পাশাপাশি আরেকটি পিতলের মূর্তি তৈরি করেছিলেন এবং পূজার আগের দিন পুকুরে মূর্তি ঘষামাজার সময় ওই দুটি মূর্তি পরিবর্তন করে ফেলেন। যখন পূজা আরম্ভ হবে তখন সেই কর্মকার রাজার অনুমতিক্রমে সত্যটা প্রকাশ করেন।
ধর্মীয় রীতিতে এক মন্দিরে দুই পূজা না হওয়ার কারণে রাজা সীতারাম রায় ওই কর্মকারকে তখন পিতলের মূর্তিটি তার নিজ বাড়িতে (নলিয়া গ্রামে) পূজা করার নির্দেশ প্রদান করেন এবং মন্দির স্থাপন করেন। সেই থেকেই সৃষ্টি হয় নলিয়া জোড়বাংলা মন্দির। জোড়বাংলা মন্দিরকে কেন্দ্র করে তৎকালীন সময়ে ৮টি মন্দির স্থাপন করেন রাজা সীতারাম রায়।
স্থানীয়রা জানায়, প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে মন্দিরগুলো দেখতে মানুষ ভিড় জমায়। অনেক দর্শনার্থী বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতি কমপ্লেক্সে এসে এই মন্দিরগুলো পরিদর্শন করতে আসেন। সংরক্ষণের অভাবে বর্তমানে ৮টি মন্দিরের মধ্যে ৩টি রয়েছে। প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে মন্দিরগুলো রক্ষা করে এই অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্যকে শক্তিশালী করতে পারত বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
মন্দিরের বর্তমান সেবাইত বিদ্যুৎকুমার মুখার্জি বলেন, সীতারাম রায়ের আমল থেকে এখানে অনেক জায়গা ছিলো। এখন সেগুলো বেদখলে। বর্তমানে মন্দিরের নামে মাত্র ৩১ শতাংশ জমি রয়েছে। জোড়বাংলা মন্দিরসহ এখানে ৮টি মন্দির থাকলেও বর্তমানে ৩টি মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরগুলোর বর্তমান অবস্থা খুবই শোচনীয়। দ্রুত সংস্কার করা না হলে মন্দিরগুলোর অস্তিত্ব থাকবে না।
বালিয়াকান্দি নির্মল সাংস্কৃতিক একাডেমির অধ্যক্ষ উত্তম কুমার গোস্বামী বলেন, জোড়বাংলা মন্দিরগুলো অনেক পুরাতন। আমরা বিভিন্ন সময় পরিবারের লোকজন নিয়ে সেখানে যাই। বালিয়াকান্দিতে চোখে পড়ার মতো হাতে গোনা ৩-৪টি স্থাপনা রয়েছে। তার মধ্যে নলিয়া জোড়বাংলা মন্দির অন্যতম।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, মন্দিরগুলোর বিষয়ে আপনার কাছ থেকে প্রথমবারের মতো জেনেছি। ইতিহাস, ঐতিহ্য রক্ষার জন্য পুরাতন স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ করা দরকার। মন্দিরগুলো সরকারি জায়গায় কি না সেগুলো জেনে দ্রুত সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
এমএসআর