মাঝরাতে ব্যথায় কেঁদে ওঠে জুঁই, মেয়েকে বাঁচাতে মায়ের আকুতি

সহপাঠীরা দলবেঁধে স্কুলে যায়। ক্লাসের ফাঁকে মেতে ওঠে নানা খুনসুটি আর দুরন্তপনায়। কিন্তু ৯ বছর বয়সী জুঁই তার সহপাঠীদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসে শামিল হতে পারে না। অসুস্থতার কারণে স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে। একটু পরপর বুকের ব্যথায় হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। মেয়ের এমন কষ্টে বুকফাটা আর্তনাদ ছাড়া কিছুই করার নেই মা চম্পা বেগমের।
আখাউড়া উপজেলা সদরের মসজিদপাড়ার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম ও চম্পা বেগম দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে তানাছ ইসরাত জুঁই বড়। জাহাঙ্গীর আলম পেশায় রিকশাচালক। আর চম্পা বেগম বাসা-বাড়িতে কাজ করেন। তারা মসজিদপাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। অভাব-অনটনে কোনো রকমে সংসার চলে তাদের। জুঁইয়ের হার্টে ছিদ্র ধরা পড়েছে। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন তিন লাখ টাকা। কিন্তু তার হতদরিদ্র বাবা-মায়ের পক্ষে এত টাকার যোগান দেওয়া সম্ভব না।
জুঁইয়ের পরিবার জানিয়েছে, জুঁই আখাউড়া উপজেলা সদরের নাছরীন নবী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। ৫-৬ মাস ধরে তার বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে। একটু হাঁটাচলা করলেই হাঁপিয়ে ওঠে। তখন বুকে ব্যথা বেড়ে যায় এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সেজন্য সে এখন আর স্কুলে যেতে পারে না। এমনকি বুক ব্যথার কারণে মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে সে।
জুঁই জানায়, বুক ব্যথার কারণে তার অনেক কষ্ট হয়। তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় না, খেলতেও পারে না। সে সুস্থ হয়ে আবারও স্কুলে যেতে চায়। চিকিৎসার জন্য সবার সহযোগিতা চেয়েছে সে।
জুঁইয়ের মা চম্পা বেগম বলেন, মেয়েটা ব্যথা-ব্যথা বলে সারাক্ষণ কাঁদতে থাকে। ব্যথা কমানোর জন্য গ্যাসের ওষুধ খাওয়াতাম। কয়েক মাস আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জুঁইয়ের হার্টে ছিদ্র জানিয়ে ওকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউট অথবা হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যেতে বলে।
এরপর হৃদরোগ ও হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা বলেন, দ্রুত জুঁইয়ের হার্টের অপারেশন করতে হবে। দিন দিন ওর রোগটা জটিল হচ্ছে। ভারতে নিয়ে গিয়ে অপারেশন করার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। কিন্তু ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করানোর মতো সক্ষমতা নেই জানালে, ডাক্তাররা ঢাকায় অপারেশন করাতে রাজি হন।
তিনি আরও বলেন, অপারেশনের জন্য তিন লাখ টাকা লাগবে। কিন্তু এত টাকা যোগাড় করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আমার স্বামীর একটি হাত ভাঙা। এই ভাঙা হাত নিয়েই রিকশা চালায় সে। স্বামীর আয়ে সংসার চলে না বলে আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করি। দুইজনের অল্প আয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। টাকার জন্য অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারছি না। মা হয়ে মেয়ের এই কষ্ট সহ্যও করতে পারছি না। আমার নিজের জীবন দিয়েও যদি মেয়ের কষ্ট কমাতে পারতাম।
মেয়েটা যখন ব্যথায় ছটফট করে কাঁদে, তখন নিজেকে অনেক অসহায় মনে হয়। আমার মেয়েকে বাঁচাতে সবার সহযোগিতা চাই। সবাই মিলে আমার মেয়েটাকে বাঁচান। অসুস্থ জুঁইয়ের চিকিৎসায় সহযোগিতার জন্য তার মা চম্পা বেগমের সঙ্গে এই নম্বরে ০১৭০৩৫৫২৬৩৬ যোগাযোগ করা যাবে।
জুঁইয়ের প্রতিবেশী সুমন চৌধুরী জানায়, জুঁইয়ের পরিবার প্রতিদিন তার বাড়িতে এসে কান্নাকাটি করে। তিনি তার সাধ্যমতো জুঁইয়ের চিকিৎসায় সহযোগিতার চেষ্টা করছেন।
আখাউড়া পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ইমরান বলেন, জুঁইয়ের পরিবার খুবই দরিদ্র। তার পরিবারের পক্ষে তিন লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসা করানোর সক্ষমতা নেই। আমি নিজেও চেষ্টা করছি শিশুটির চিকিৎসার জন্য বিভিন্নজনের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা নিতে। পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফাও শিশুটির চিকিৎসায় সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
আজিজুল সঞ্চয়/এসপি