তেল দিয়া আমাগো জেলেগো পেডও চলে

‘তেল দিয়া লঞ্চ আর বাস চলে না। তেল দিয়া আমাগো জেলেগো পেডও চলে। এই তেল না হইলে আমরা নদীত যাইতে পারি না। আগে তেল ৬০ টাকা আছিল, হেই সময় আমরা হাজার হাজার টাকা দেনা হইয়া গেছি দোকানে। এহন আমরা আগের দেনা দিমু? এহন আবার তেলের দাম বারতি হইছে। এহন আমরা দেনা তো ভালা কতা, ভাগিযোগিই যাইতে চায় না নৌকাত।’
এভাবেই ক্ষোভ আর আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন ভোলার সদরের তুলাতুলি মাছঘাট এলাকার বশার মাঝি।
তিনি আরও বলেন, ‘নৌকায় গেলে মাছ পায় দুই হাজার টাকার আর তিন হাজার টাকা হয় দোয়ানো। তয় ভাগিগো পেট চলব কেমনে? সংসার চলব কেমনে? সরকারের কাছে আমাগো দাবি, সরকার তেলের দাম কমাইয়া দেউক, যাতে আমরা কোনো রকম খাইয়া লইয়া বাচতাম পারি।’
জানা যায়, জেলায় প্রায় তিন লাখ জেলের জীবিকা নির্বাহ হয় নদী ও সাগর মোহনায় মাছ শিকার করে। তাদের প্রায় সব নৌকা ও ট্রলারই ইঞ্জিনচালিত। তারা জ্বালানি খাতে ডিজেলের ওপর নির্ভরশীল। অভাব-অনটন, মহাজনের দাদনের টাকা ও এনজিওর ঋণের বোঝার পাশাপাশি হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ভোলার জেলেপাড়ায় জেলেদের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।

ভোলার ইলিশা ও তেমাথার জেলেপল্লির জাহাঙ্গীর ও খোরশেদ মাঝি বলেন, অভিযান ছিল। আমরা নদীতে যাইতে পারি নাই। এতে আমাগো অনেক দেনা হইছে। লগে এনজিও স্যারেগো চাপ। এহন নদীতে যামু সরকার তেলের দাম বাড়াইয়া দিছে। লিটারপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা বাড়াইছে। এহন নদীতে ৮টা তেল লইয়া গেলে দুই-এক হাজার টাকার মাছ পাই। তা দিয়া সংসার চলে না। আগে তেল নিতাম ৬২ টাকায় আর এখন নিতে হয় ৮৮ টাকা। আগে নদীতে গেলে কোনোরকম সংসার চললেও এহন আমরা নদীতে গেলে দেনা হইয়া যায়।
তুলাতুলি ও নাছির মাঝি মাছঘাট এলাকার কাশেম মাঝি ও চান মিয়া মাঝি বলেন, সরকার তেলের দাম বাড়াইছে। এতে আমরা নদীতে গেলে আমাগো কোন পরতা (লাভ) হয় না। তেলের দাম বাড়াইয়া আমাগোরে বিপদে হালইছে। এহন সরকারের কাছে আমাগো দাবি, তেলের দামডা কমাইয়া দেন। নইলে বউ-পোলাইন লইয়া পথে বইতে হইব।

ইলিশা মাছঘাটের আড়তদার মো. শেখ ফরিদ বলেন, একটা জেলে নদীতে যাইতে ২০০ থেকে ২৫০ লিটার তেল লাগে। এই তেল লইয়া যাইয়া হেরা মাছ পাইতাছে কম কোন রকম পোষে না। এহন জেলেরও ক্ষতি, আমাদেরও ক্ষতি। আমাদের ব্যবসা করার আর উপায় নাই। জেলেরা যদি নদীতে না যায়, আমরা ব্যবসা করমু কী দিয়া?
ভোলা জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ ফরাজি জানান, অভিযানের পর নদীতে মাছ কম থাকার কারণে জেলেরা হতাশ ছিলেন। এখন আবার তেলের দাম বাড়ার কারণে জেলেরা নতুন করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। যদি তেলের দাম বাড়ানো থাকে, তবে জেলেরা নদীতে গিয়ে পোষে না। সরকারের কাছে দাবি, তেলের দামডা যাতে কমানো হয়। তাতে তারা পরিবার-পরিজন নিয়া ভালোভাবে থাকতে পারবে।
একই রকম ভোলা জেলার প্রায় তিন লাখ জেলে অতিদ্রুত জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে আনার দাবি তোলেন।
ইমতিয়াজুর রহমান/এনএ