স্ট্রোক করেছেন লুসি হল্ট, দেখতে গেলেন বরিশালের ডিসি

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখা দ্বৈত নাগরিক সিস্টার লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্টের চিকিৎসা সহায়তা করেছে বরিশালের জেলা প্রশাসন। শনিবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লুসি হল্টকে দেখতে যান জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার।
এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশর অকৃত্রিম বন্ধু বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়া ব্রিটিশ নাগরিক সিস্টার লুসি হল্ট। তার প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ গণভবনে ডেকে নিয়ে তার হাতে বাংলাদেশর নাগরিকত্ব তুলে দেন। তার চিকিৎসার সার্বিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিকিৎসকের সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। যদি তিনি সুস্থ বোধ না করেন তাহলে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
এ সময় জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আল-মামুন তালুকদার, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার সুব্রত বিশ্বাস দাস, সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ, হাসপাতাল সমাজসেবা অফিসার দিলরুবা রইচি প্রমুখ।
সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সময় সিস্টার লুসি হল্টের চিকিৎসার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসার ব্যয়স্বরূপ ১০ হাজার টাকা এবং ফল উপহার দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, সিস্টার লুসি হল্ট মিনি স্ট্রোক করেছেন। তার রক্তচাপ মাত্রাতিরিক্ত এ কারণে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল সীমিত হয়ে স্ট্রোক করেন। তবে বর্তমান অবস্থা ভালো। আশা করা যায় খুব শিগগিরই সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি। লুসি হল্ট বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) রাতে অক্সফোর্ড মিশনে চ্যারিটেবল নিবাসে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতেই শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের সেন্ট হ্যালেন্সে জন্ম নেন এই মহান মানুষটি। বাবা জন হল্ট ও মা ফ্রান্সিস হল্ট। দুই বোনের মধ্যে ছোট লুসি। তার বড় বোন রুৎ অ্যান রেভা ফেলটন স্বামী ও তিন ছেলে নিয়ে ব্রিটেনেই বসবাস করেন। লুসি ১৯৪৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক (দ্বাদশ) পাস করেন। তিনি ১৯৬০ সালে প্রথম বাংলাদেশে আসেন। যোগ দেন বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে। এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের পড়াতেন। এরপর আর দেশে ফিরে যাননি। ৫৭ বছর ধরে বরিশাল ছাড়াও কাজ করেছেন যশোর, খুলনা, নওগাঁ, ঢাকা ও গোপালগঞ্জে। আগামী মাসে ৯২ বছর পূরণ হবে তার। তিনি বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের মায়ায় এখানেই ৬০ বছর ধরে রয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে জনমত গঠন এবং হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিয়ে সহায়তা করেছিলেন ব্রিটিশ এই নাগরিক।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএএস