সরকারের কৃষক সিম্পেথির সুযোগে মুনাফালোভীরা পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে কী?

দেশের বাজারে প্রায় দেড় মাস ধরে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ‘দাম না কমলে’ আমদানির হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। তা সত্বেও দাম কমেনি রান্না ঘরের অতীব জরুরি এই পণ্যটি। উল্টো, গত দুই-তিন দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম আরও ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ১৬০ টাকা হয়েছে।
এক সপ্তাহ আগেই কৃষি উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন, দেশের কৃষকদের কথা বিবেচনায় নিয়ে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাই, অসাধু ব্যবসায়ীরা ধরেই নিয়েছে সরকার বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসার অপেক্ষা করবে। এই সুযোগে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু মুনাফালোভিরা। অথচ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে গত অর্থবছরের উৎপাদাতি পেঁয়াজের ১ লাখ টনের বেশি এখনো মজুদ রয়েছে।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি দেশীয় পেঁয়াজ খুচরা পর্যায়ে ১৪০–১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা দুই-তিন দিন আগেও ১১০-১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আজ থেকে দেড় মাস আগে বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ পাওয়া যেত ৭০-৮০ টাকা দরে। সে হিসেবে মাত্র দেড় মাসে দেশীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ।
খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজের দাম শুনে অনেক ক্রেতাই হতবাক হচ্ছেন। কেউ কেউ তর্কেও জড়াচ্ছেন। অনেকেই আবার না কিনে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ যে পরিমাণ কিনতে এসেছিলেন, তার অর্ধেক নিয়ে চলে যাচ্ছেন।
তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও পাবনারসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে পর্যপ্ত পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে চাহিদা বিবেচনায় আমাদেরও বেশি দাম দিয়ে কিনে আনতে হচ্ছে। গত দুই-তিনদিনে আগের তুলনায় ৪০ টাকা পর্যন্ত বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ফলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না দেওয়ায় বাজারে এই দূরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরকার চাইলে যেকোন সময়ে আমদানির অনুমতি দিয়ে বাজারে পেঁয়াজের দাম ৩৫ টাকায় নামিয়ে আনতে পারে।
এ বিষয়ে শ্যামবাজার পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আমদানিকারক মোহাম্মদ আব্দুল মাজেদ বলেন, বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি থাকায় দাম বাড়ছে। দুই মাস ধরে আমরা পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা করছি, কিন্তু এখনো অনুমতি পাইনি। প্রতিবেশী দেশে পেঁয়াজের দাম বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ১০ টাকা। অনুমতি পেলে সব খরচ মিলিয়ে আমরা ৩০-৩৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারতাম এবং বাজার স্বাভাবিক হয়ে যেত। আমাদের এখানে নতুন পেঁয়াজ আসতে আরও এক থেকে দেড় মাস লাগবে। এরপর হয়তো দাম স্বাভাবিক হবে।
তবে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. জামাল উদ্দীন বলেন, প্রকৃতপক্ষে বাজারে সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। আমদানির অনুমতি দিতে সরকারকে বাধ্য করতেই সিন্ডিকেটচক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। অথচ এখনো এক লাখ টনেরও বেশি পুরোনো পেঁয়াজ আছে।
বাজারে পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই জানিয়েছেন কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও। তিনি গত ২৬ নভেম্বর এক ব্রিফিংয়ে বলেন, কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী পেঁয়াজ আমাদনির জন্য আমাদের ওপর অনেক চাপ প্রয়োগ করেছে। তারা কোর্টেও গেছেন, যাতে আমরা পেঁয়াজ আমদানি করি। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে কৃষকদের কথা চিন্তা করে পেঁয়াজ আমদানি করতে দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে পেঁয়াজের নতুন একটি জাত উদ্ভাবন করেছে, সেটি গ্রীস্মকালীন। ওই পেঁয়াজটা বাজারে আসতে শুরু করেছে। আবার মুড়িকাটা পেঁয়াজটাও আসা শুরু হয়েছে। এ জন্য পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
কৃষি উপদেষ্ট আরও বলেন, আমদানি করলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষকরা একবার ক্ষতিগ্রস্ত হইলে কিন্তু তারা ওই চাষের দিকে আর যাবে না। এ জন্য আমাদের সবসময় কৃষকদের দিকে তাকাতে হবে।
এমএমএইচ/এসএম