দুই মাসে ১১শ কোটি ডলার হারিয়েছেন জ্যাক মা

হঠাৎ করেই ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে চীন সরকার। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের হস্তক্ষেপে ঠেকিয়ে দেয়া হয়েছে আলিবাবা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যান্ট গ্রুপের আইপিও। এরপরেই আলিবাবার বিরুদ্ধে দেশটির সরকারি তদন্ত শুরু হয়েছে। এর জের ধরে আলিবাবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা মাত্র দুই মাসে ১ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের সম্পদ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
৫৬ বছর বয়সী সাবেক শিক্ষক জ্যাক মা চীনের প্রযুক্তিখাতের বিস্ময়কর উত্থানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। চলতি বছর তার সম্পদের পরিমাণ ৬১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। শেয়ার মার্কেটে অ্যান্ট গ্রুপ ঢুকলে জ্যাক মার সম্পদের পরিমাণ ৭ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
কিন্তু অক্টোবরের শেষ নাগাদ চীন সরকার তার কোম্পানির বিষয়ে কঠোর নিরীক্ষা ও তদন্ত কার্যক্রম শুরু করায় তার সম্পদ দুই মাসে ১১ বিলিয়ন ডলার কমে বছর শেষে ৫০ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ফলে ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সে বিশ্বের ৫০০ ধনী ব্যক্তির তালিকায় ২৫তম স্থানে নেমে গেছেন জ্যাক মা।
ই-কমার্স খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগে সম্প্রতি চীনের বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফর মার্কেট রেগুলেশন (এসএএমআর) বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে।
ই-কমার্স জায়ান্ট এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আলিবাবা প্ল্যাটফর্মে পণ্য বিক্রেতারা অন্য কোনো ই-কমার্স সাইটে পণ্য বিক্রি করতে পারছে না।
অভিযোগ রয়েছে, পণ্য বিক্রেতাদের হয় আলিবাবার সঙ্গে অথবা অন্য কোনো ই-কমার্সের সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে বলে আলিবাবা শর্ত দিচ্ছে। অন্য কোনো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে পণ্য বিক্রি করলে তারা আলিবাবায় নিবন্ধনের সুযোগ পাবে না। দুটির মধ্যে একটি বেছে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা নিয়ে বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে আলিবাবা।
ইতোমধ্যে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আলিবাবার বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু করেছে এসএএমআর।
এদিকে আলিবাবার বিনিয়োগ বিভাগ অ্যান্ট গ্রুপ তথা আলিপের সঙ্গে বসতে যাচ্ছে চীনা আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আলিপের লাখ লাখ ব্যবহারকারীর আর্থিক লেনদেনের নিরাপত্তার উদ্বেগ থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে চীনা কর্তৃপক্ষ।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, চীনের ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেট স্পেসে প্রতিযোগিতাবিরোধী মনোভাব দূর করতে উঠেপড়ে লেগেছে জিনপিং সরকার। আর তাই আলিবাবার বিরুদ্ধে চীনা সরকারের এই পদক্ষেপ।
এর আগে নভেম্বর মাসে অ্যান্ট গ্রুপের পরিকল্পিত ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের আইপিও আটকে দেয় চীন। সাংহাই ও হংকং স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার ছাড়ার মাত্র দুদিন আগেই অ্যান্ট গ্রুপের আইপিও আটকে দেওয়া হয়। শেয়ার মার্কেটে অ্যান্ট গ্রুপ ঢুকলে সেটি হতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় আইপিও। এতে জ্যাক মার সম্পদের পরিমাণ ৭ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
এমনকি চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র পিপল’স ডেইলি এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করে লিখে,‘যদি একচেটিয়া আচরণ সহ্য করা হয় এবং প্রতিষ্ঠানকে অসংযত হয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে শিল্প মোটেই উন্নত হবে না।’
বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, হংকংয়ে আলিবাবার শেয়ার মূল্য ইতোমধ্যেই ৯ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে, আলিবাবার প্রতিদ্বন্দ্বী মেইটুয়ান ও জেডি ডটকমের শেয়ার মূল্য কমেছে ২ শতাংশেরও বেশি।
গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে একটি আলোচনা সভায় অংশ নিয়েছিলেন আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। সেখানে তিনি চীনের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার সমালোচনা করেন। এই তদন্তের সিদ্ধান্তের পেছনের মূল কারণ হিসেবে এই সমালোচনা দায়ী বলে অনেকেরই বিশ্বাস।
জ্যাক মা বলেছিলেন, চীনা ব্যাংকগুলো ‘বন্ধকী দোকান’ মানসিকতা নিয়ে পরিচালিত হয়। ব্যাংক নিয়ন্ত্রকরা চিংড়ি ব্যবসায়ীদের মতো ছোট মন নিয়ে বসে আছেন।
এ কারণেই অনেকের ধারণা, তিনি এখন হয়তো ওই মন্তব্যের মূল্য দিচ্ছেন।
টিএম