স্কুলে বাধ্যতামূলক ধর্মীয় পোশাক নিষিদ্ধ করল ইন্দোনেশিয়া

সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের বিশেষ কোনো ধর্মীয় পোশাক পরে আসতে বাধ্য করা যাবে না-মর্মে একটি ডিক্রি অর্থাৎ আদেশ জারি করেছে ইন্দোনেশিয়া সরকার। গত বুধবার দেশটির ধর্মমন্ত্রী ইয়াকুত খলিল কুমাস সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
ডিক্রিতে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার স্কুলগুলোকে ৩০ দিনের মধ্যে সরকারের এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে হবে। কোনও স্কুল যদি এর ব্যত্যয় করে, সেক্ষেত্রে সরকার ওই স্কুলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
এই আদেশ জারির প্রসঙ্গে ধর্মমন্ত্রী ইয়াকুত খলিল সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনও ধর্মই সামাজিক সংঘাত উস্কে দেওয়াকে সমর্থন করে না; আর জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রতি সহনশীল আচরণ সব ধর্মেরই মর্মবস্তু।’
সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপ বা রাজ্যের প্রাদেশিক রাজধানী পেদাং শহরের একটি স্কুলে এক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ছাত্রীকে অন্যান্য মুসলিম ছাত্রীদের মতো মাথায় হিজাব পরে আসতে বলা হয়। এ নিয়ে ওই ছাত্রীর অভিভাবকরা স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে এলে কর্তৃপক্ষ তাদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, যদি তারা তাদের মেয়েকে ওই স্কুলে রাখতে চান, সেক্ষেত্রে অবশ্যই মেয়েকে হিজাব পরিয়ে স্কুলে পাঠাতে হবে।
স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই আলাপচারিতা গোপনে ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করেছিলেন ওই দম্পতি; পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন তারা। এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায় এবং স্কুলগুলোতে অন্য ধর্মাবলম্বী ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে অসহনশীল আচরণের প্রতিবাদে দেশজুড়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়।
এমনকি সরব হয়ে ওঠেন ইন্দোনেশিয়া সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরাও। দেশটির শিক্ষামন্ত্রী নাদিম মাকারিম এ সম্পর্কে বলেন, ‘স্কুলে কোনও শিক্ষার্থী ধর্মীয় পোশাক পরে আসবে কিনা তা নির্ধারণ করবে ওই শিক্ষার্থী বা তার অভিভাবকরা। স্কুল কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া বা চাপিয়ে দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এটা তাদের কাজ নয়।’
ওই ছাত্রীর বাবা এলিয়ানু হিয়া বিবিসি ইন্দোনেশিয়াকে বলেন, ‘আমার মেয়েকে প্রায় প্রতিদিন স্কুলের শিক্ষকরা তলব করত এবং প্রশ্ন করত কেন সে হিজাব পরে আসেনি; আর উত্তরে সে বলত যে সে মুসলিম নয়। আমি যদি মেয়েকে হিজাব পরিয়ে স্কুলে পাঠাই…তাহলে তার মানে দাঁড়ায় আমি তার ধর্মীয় পরিচয় লুকিয়ে তাকে সেখানে পাঠাচ্ছি।’
‘এখন আমার কথা হলো, অমুসলিম বলে কি নিজের ধর্মপালনের অধিকার আমার নেই? এটা তো একটা সাধারণ পাবলিক স্কুল…কেন আমার মেয়েকে জোর জবরদস্তি করা হবে?’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ঘটনার ব্যাপক সমালোচনার প্রেক্ষিতে ওই স্কুলের অধ্যক্ষ অবশ্য ইতোমধ্যে ক্ষমা চেয়েছেন। পাশাপাশি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, স্কুলের সব শিক্ষার্থী তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী পোশাক পরে আসতে পারবে।
সম্প্রতি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশটিতে অন্যান্য ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অসহনশীল আচরণের প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সরকারের এই আদেশকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর ইন্দোনেশিয়া শাখার একজন গবেষক আন্দ্রেস হারসোনো বলেন, ‘দেশের ২০ প্রদেশের বিভিন্ন স্কুলে এই প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছিল। সরকারের এই আদেশ ইন্দোনেশিয়ার প্রকৃত সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।’
বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়ায় সাংবিধানিকভাবে ৬ টি ধর্ম স্বীকৃত। এছাড়া ‘পানকাসিলা’ নামে ইন্দোনেশীয় সংস্কৃতির বহুত্ববাদী একটি মতবাদকে রাষ্ট্রের দর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে দেশটির সংবিধানে।
সূত্র: বিবিসি
এসএমডব্লিউ