সৌদিকে টিকা দেওয়ায় ভারতীয় প্রবাসীরা ক্ষুব্ধ

ভারত সৌদি আরবে লাখ লাখ করোনা টিকা রপ্তানি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশটির বৃহৎ প্রবাসী জনগোষ্ঠী। কারণ সৌদি রাজতন্ত্রের কয়েক মাস ধরে চলা ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা সৌদি আরবে বন্দি হয়ে আছেন। এতে করে উদীয়মান অর্থনীতির দুই মিত্র দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েনও শুরু হয়েছে। খবর আলজাজিরার।
সৌদি আরবে প্রবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভারতীয়রা সবচেয়ে বেশি। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কঠোর বিধিনিষেধের কারণে তারা বেশ বিপদে পড়েছেন। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভারত সরকারের পদক্ষেপ আশা করছেন তারা।
চলতি সপ্তাহে সৌদি আরব বিশ দেশ থেকে দেশটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়েছে। এরমধ্যে প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাত ছাড়াও যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র রয়েছেন। বিনোদন অনুষ্ঠানগুলোও স্থগিত করা হয়েছে।
দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাসের ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞায় সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন সৌদি আরবে অবস্থানরত ভারতীয় শ্রমিকরা। এতে করে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। চাকরি ও ব্যবসায়িক চুক্তি হারাতে হচ্ছে। অনেকে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকায় দেশের পরিবারের কাছেও ফিরতে পারছেন না। যা নিয়ে তাদের ক্ষোভ এখন চরমে।
সৌদি আরবে ২৬ লাখ ভারতীয় নাগরিকের বাস। গত সেপ্টেম্বরে দেশটি ভারত, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলোর ওপর ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এতে করে সৌদি আরবে হাজার হাজার ভারতীয় এখন বন্দি।
সৌদি আরবে ভারতের কূটনৈতিক মিশনের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট আটকে পড়া এসব কর্মীদের পাঠানো ক্ষুব্ধ বার্তা ও নানান অভিযোগে পূর্ণ হয়ে গেছে। আটকে পড়া হাজার হাজার ভারতীয় প্রবাসীকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা না করেই রিয়াদের কাছে করোনা টিকা রপ্তানির নয়াদিল্লির নেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।
টুইটারে রিয়াদের ভারতীয় দূতাবাসকে মেনশন করে একজন লিখেছেন, ‘ভারতের সৌদি আরবকে টিকা দেওয়া উচিত হয়নি। কারণ তারা ভারতীয় ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে। এতে লাখ লাখ শ্রমিকের জীবন মারাত্মক সংকটে।’
ভারতীয়দের সৌদিকে নিয়ে এই ক্ষোভের শুরু উত্তরপ্রদেশের এক তরুণ প্রকৌশলীর হাত ধরে। পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে গত গ্রীষ্মকালে তিনি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার কারণে আটকে পড়ে রয়েছেন। এখনো তার সৌদি ফেরা হয়নি। তার সেই ক্ষোভ বারুদের মতো চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে।
নাম যেন প্রকাশ করা না হয় এমন অনুরোধ করে ওই তরুণ প্রকৌশলী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘দিনরাত আমরা কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ্য করে টুইট করছি। তাদের সাহায্য প্রার্থনা করছি। কিন্তু তারা এ বিষয়ে তেমন কিছুই করছেন না। গোটা ভারত টিকা বিক্রির বিষয়ে মনোযোগী। আমাদের কথা ভুলে গেছেন তারা।’
ভারতীয় কর্মকর্তারা অবশ্য টিকা রপ্তানির সঙ্গে ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি মেলাতে রাজি নন। তবে বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে এক ধরনের কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। এখন পর্যন্ত রিয়াদও এ নিয়ে দিল্লিকে ইতিবাচক কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।
সূত্রের বরাতে এএফপি জানাচ্ছে, করোনায় তৈরি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি মোকাবিলায় এমন পদক্ষেপ বলে ভারতকে বোঝাতে চাচ্ছে রিয়াদ। তবে সৌদিতে কমে আসা সত্ত্বেও নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেওয়া দেশটির প্রবাসী কমানোর পরিকল্পনা বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন অনেকে।
এএস