মিয়ানমারে শক্তিশালী হচ্ছে অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলন

মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ও গৃহবন্দি নেত্রী অং সান সু চির মুক্তির দাবিতে দেশটির বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের চলমান অসহযোগ আন্দোলন দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এবার এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন মিয়ানমারের প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের ডাগন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার বিকেলে ডাগন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে জড়ো হন কয়েকশ’ শিক্ষক-শিক্ষার্থী। এ সময় তারা সু চির মুক্তির দাবি ও সামরিক শাসন বিরোধী স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি তিন আঙ্গুলের স্যালুট বা অভিবাদন দেওয়ার মাধ্যমে প্রতীকী প্রতিবাদ জনান, যার অর্থ তারা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি আন্দোলনকারীরা ‘আমাদের মা সু (অং সান সু চি) দীর্ঘজীবী হোন’ বলে স্লোগান দেন এবং হাতে থাকা সু চির দল এনএলডির পতাকা নাড়েন।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ডাগন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী মিন সিথু ফ্রান্সভিত্তিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা বর্তমান প্রজন্ম সামরিক স্বৈরশাসনের জাঁতাকলে নিজেদের সঁপে দিতে পারি না।’
এর একদিন আগে বৃহস্পতিবারে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দেশটির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে পরিচিত মান্দালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ওই মিছিল থেকে চারজনকে গ্রেফতার করেছে মিয়ানমার পুলিশ।
পাশাপাশি অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে চলছে সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী প্রচার-প্রচারণা। এর ব্যাপকতার মাত্রা দেখে এক পর্যায়ে দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় বর্তমান সেনা সরকার।
তবে মিয়ানমারের সামরিক শাসনবিরোধী জনগণ তাতে দমে যাননি। ফেসবুক বন্ধ ঘোষণার পর টুইটার ও ইন্সটাগ্রামে তারা প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। এনএলডির একজন শক্ত সমর্থক হিসেবে পরিচিত ৭৯ বছর বয়সী উইন হেইথ এ সম্পর্কে বলেন, ‘তারা (সেনাবাহিনী) আমাদের আন্দোলনকে ভয় পাচ্ছে বলেই ফেসবুক বন্ধ করেছে।’
এদিকে মিয়ানমারে ফেসবুক বন্ধের পর থেকে টুইটার ব্যবহার করছেন এমন ব্যবহারকারীর সংখ্যা কত- এ বিষয়ে টুইটার কর্তৃপক্ষকে বিবিসি প্রশ্ন করলে তার উত্তর দিতে রাজি হয়নি টুইটার।
গত সোমবার ভোরবেলায় রক্তপাতহীন এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। দেশটির সেনাপ্রধান মিং অং হ্লেইং এর নেতৃত্বে সংঘটিত ওই অভুত্থানে বন্দি হন মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী সু চি এবং তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) বেশ কয়েকজন সদস্য। এদের মধ্যে সু চির মন্ত্রিসভার কয়েকজন মন্ত্রী, প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী ও পার্লামেন্ট সদস্যরাও রয়েছেন।
সেনাবাহিনীর অভুত্থানের অব্যবহিত পরই ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন মিয়ানমারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গণপ্রতিবাদে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা ‘অমঙ্গল দূর হবে’ বলে স্লোগান দেন এবং রীতি অনুযায়ী অমঙ্গল দূর করতে হাঁড়ি-পাতিল বাজান।
এছাড়া চলমান অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে দেশটির রাজধানী নেইপিদো, প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনসহ অন্যান্য শহরের ৭০টি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, সামরিক সরকারের অধীনে তারা চিকিৎসাসেবা দেবেন না।
ধর্মঘটে অংশ নেওয়া পশ্চিম ইয়াঙ্গুন জেনারেল হাসপাতালের সাবেক চিকিৎসক কিয়াও এ বিষয়ে ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে, ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে।’
সূত্র: বিবিসি
এসএমডব্লিউ