ব্যবসায়ীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে গ্রেপ্তার ৫

চট্টগ্রামের খুলশী থানার জাকির হোসেন রোডের এক দোকানে ব্যবসায়ীকে ইয়াবা ও কার্তুজ দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচজন। রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় ‘হেয়ার অ্যান্ড ফেয়ার’ নামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রথমে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নগরীর বিভিন্নস্থানে রাতভর অভিযান চালিয়ে আরও চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- লালখান বাজার এলাকার ইফতেখার করিম চৌধুরী (৪৮), নজরুল ইসলাম (৪২), জামাল হোসেন (৪১), মো. সোহেল (২৬) এবং হালিশহর এলাকার মো. ফয়সাল (২০)।
ঢাকা পোস্টের হাতে আসা হেয়ার অ্যান্ড ফেয়ার দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, প্রথমে টাক মাথার এক ব্যক্তি কাস্টমার সেজে দোকানে প্রবেশ করেন। এর পরপরই ফয়সাল দোকানটিতে প্রবেশ করে কাস্টমারদের জন্য রাখা সোফায় বসেন। এক পর্যায়ে দোকানের ম্যানেজার ব্যস্ত হয়ে গেলে ফয়সাল নিজের প্যান্টের পকেট থেকে কালো টেপে মোড়ানো একটি বস্তু সোফার সিটের নিচে রাখেন। আরেকটি বস্তুও প্যান্টের পকেট থেকে তাকে সোফার নিচে রাখছে দেখা যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তথ্য আসে খুলশি এলাকার হেয়ার অ্যান্ড ফেয়ার নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইয়াবা রাখা আছে। সংবাদ পেয়ে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান পরিচালনার জন্য যায়। পুলিশ গিয়ে দোকানের সোফা থেকে ২০০ পিস ইয়াবা ও চার পিস কার্তুজ উদ্ধার করে।
পরে দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করেন গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাতে দেখা যায় তথ্যদাতার সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন একজন কাস্টমার হিসেবে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলছে। আরেকজনকে সোফায় ইয়াবাগুলো লুকিয়ে রাখতে দেখা যায়। ফুটেজ দেখে ঘটনাস্থল থেকে ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, সোহেল নামে এক ব্যক্তি ৫০০ টাকার বিনিময়ে দোকানে এগুলো রাখতে দিয়েছিল।
পরে তার দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে সোহেলকে টাইগারপাস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্বীকারোক্তিতে সোহেল জানান, নজরুল নামে একজন ব্যক্তি তাকে এ কাজ করাতে বলেছেন। পরে নজরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। নজরুল জানান, ইফতেখারের কাছ থেকে ইয়াবা এবং কার্তুজগুলো তিনি পেয়েছে। এরপর ইফতেখারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রউফ।
অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার শাহ আব্দুর রউফ আরও বলেন, ইফতেখার কেনো মান্নানকে ফাঁসাতে চেয়েছেন তা এখনও জানা যায়নি। কারা এই ঘটনার পিছনে আছে তা জানার চেষ্টা করছি। এছাড়া ইয়াবাগুলো কোথায় পেলো অর্থাৎ ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
হেয়ার অ্যান্ড ফেয়ারের মালিক আব্দুল মান্নান নামের এক ব্যবসায়ী। এটা ছাড়াও তার অন্য ব্যবসা আছে বলে জানা গেছে। আবদুল মান্নান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েকজনের সঙ্গে আমার ব্যবসায়িক বিরোধ আছে। আমার ধারণা ব্যবসায়িক বিরোধ থেকে কেউ ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে। তবে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের কাউকে চিনি না।
কেএম/এইচকে