পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ইএলএমসির
বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) এবং বাস্তবায়নে রয়েছে ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রকল্পের পুরো যাত্রা তুলে ধরা হয়।
এতে জানানো হয়, বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশ। দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কার্যকরভাবে অংশগ্রহণের জন্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে ২০২১ সালে শুরু হওয়া সাড়ে তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প শেষ হয় ২০২৪ সালে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন, বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণকে সক্রিয়করণ এবং বিভিন্ন সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সকল প্রকার বৈষম্য দূর করার উদ্দেশ্যে কাজ করা হয়।
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার এডভোকেসির একটি কৌশলগত রোডম্যাপ উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রকল্পের সম্মিলিত শিক্ষা এবং সর্বোত্তম অনুশীলন তুলে ধরা হয়। রোডম্যাপে প্রকল্পের ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের দ্বারা ক্রমাগত অ্যাডভোকেসি এবং রিসোর্স মোবিলাইজেশন-ফান্ডিং এবং প্রোগ্রামেটিক দিকনির্দেশনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ক্রিশ্চিয়ান এইডের কারিগরি সহযোগিতায় এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের আর্থিক সহযোগিতায় কনসোর্টিয়াম মেম্বার হিসেবে ব্লাস্ট, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েল সোসাইটি, নাগরিক উদ্যোগ এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ৩টি বিভাগের মোট ৮টি জেলায় ৪২ মাস মেয়াদি ‘এমপাওয়ারিং লেফট বিহাইন্ড মাইনোরিটি কমিউনিটি’ (ইএলএমসি) নামক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। ঢাকা শহরের পাশাপাশি রাজশাহী, নওগাঁ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, খুলনা, যশোর এবং সাতক্ষীরায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর ডিজি সাইদুর রহমান, ডিপার্টমেন্ট অব ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট এর ডিজি গাজী মো. সাইফুজ্জামান, ডিপার্টমেন্ট অব সোশ্যাল সার্ভিসের ডিজি ড. আবু সালেহ মোস্তফা কালাম, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক মনজুর হাসান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর কানিজ ফাতেমা।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ডিজি কেয়া খান বলেন, ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। সরকারের একার পক্ষে সবকিছু অর্জন করা সম্ভব নয় সকলের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাজ খুবই গুরত্বপূর্ণ। এই প্রকল্প পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে একটি নতুন মাত্রা তৈরি করেছে।’
বিশেষ অতিথি সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ এবং স্মার্ট অর্থনীতি যা আমাদের দেবে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম তার বক্তব্যে এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো নিবন্ধনের সময় সিভিল সোসাইটি সংস্থাগুলো যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হয় এবং ছোট ছোট সম্প্রদায়-ভিত্তিক সংস্থাগুলোর জন্য সহায়তার প্রয়োজনীয়তা এবং নিবন্ধনের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন।
নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, আমরা কেবল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করতে পারি না বরং তাদের অধিকারের জন্য তাদের সাথে সমানভাবে কাজ করতে হবে। সম্পদের ক্ষমতায়নই প্রকৃত ক্ষমতায়ন যা আমাদের এই সম্প্রদায়ের জন্য নিশ্চিত করতে হবে।
ইএলএমসি প্রকল্প কীভাবে নাগরিক সমাজকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার ইস্যুতে তাদের আওয়াজ তুলতে অনুপ্রাণিত করে সে সম্পর্কে কথা বলেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভবিষ্যতে এই ধরনের উদ্যোগ আরও বেশি নেওয়ার আহ্বান জানায়।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য রোডম্যাপ উপস্থাপন এবং যাচাই করার লক্ষ্যে বহু-স্টেকহোল্ডার সংলাপের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত হয়। আনতারা তাসমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য রাখেন ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন।
প্রসঙ্গত, এই প্রকল্পের নলেজ পার্টনার হিসেবে যুক্ত ছিল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে)। যেটি মানসম্পন্ন শিক্ষা, গবেষণা, প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বৈশ্বিক শান্তি এবং সামাজিক ন্যায়বিচারকে উৎসাহিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
পিএইচ