প্রকৃতির পর্যটন স্বর্গ বান্দরবান

বাংলাদেশের এমন একটি জেলা রয়েছে যার সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে প্রকৃতির পরতে পরতে। এ জেলার সৌন্দর্য লেখার মাধ্যমে কতটুকু বোঝানো সম্ভব তা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। প্রকৃতিপ্রেমী যারা আছেন তাদের কাছে এ জেলার সৌন্দর্য যেন স্বর্গীয় অনুভূতির মিশেলে মিশ্রিত। সুযোগ পেলে ঘুরে আসুন, উপভোগ করুন দেশের সৌন্দর্যকে। অবিমিশ্র রূপের ঝর্ণাধারার সেই জেলার নাম বান্দরবান।
বান্দরবান পুরো জেলাটাই একটা টুরিস্ট স্পট, যেন অপার সৌন্দর্যের ভ্রমণভূমি। যেখানে প্রকৃতি কথা বলে পাহাড়ে পাহাড়ে। পাহাড়, নদী আর ঝরনার দেশ বলে পরিচিত কিংবা প্রকৃতির আচলে মোড়া পর্যটন স্বপ্নভূমি।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পাহাড়ি এই জেলা প্রকৃতির অনন্য সৃষ্টি। এই জেলার প্রতিটি পাহাড়, নদী, ঝরনা ও উপত্যকা এমনভাবে সৌন্দর্যে ভরপুর যে, পুরো জেলাটিই একটি বিশাল টুরিস্ট স্পট বলে মনে হয়। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য, নানাবিধ জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও ধর্মীয় স্থাপনার কারণে বান্দরবান আজ দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব কিংবা পশ্চিম আপনি যেদিকেই অপলক দৃষ্টি দেবেন, সব দিকেই যেন এ ধরণী একই রূপে ধরা দেবে। দৃষ্টিসীমায় শুধু ভালোলাগার তৃপ্তি ছড়িয়ে আছে। পাহাড়ের পরতে পরতে প্রকৃতিকে অক্ষত রেখে বেশকিছু ইকো রিসোর্ট গড়ে উঠেছে, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অনুভব করার বাস্তবচিত্র তুলে আনতে সহায়তা করবে। নিস্তব্ধ নিশ্চুপ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে মাঝে মাঝেই প্রকৃতির ঝর্ণাধারার প্রবাহিত পানির কলতান শুনতে পাওয়া যায়। পাহাড়ে পাখির শব্দ যেন মনের ভেতর রিনিঝিনির আওয়াজ ছন্দ তোলে।
বান্দরবানের নীলগিরি, নীলাচল, চিম্বুক পাহাড়, বগালেক, কেওক্রাডং, তাজিংডং, নাফাখুম ও রিজুক ঝরনা দেশের শ্রেষ্ঠ পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এইসব সৌন্দর্য, ভ্রমণপিপাসু মানুষের মনে এক অদম্য টান জাগায়। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়া ছোট ছোট গ্রাম, আঁকাবাঁকা রাস্তা আর নৈসর্গিক দৃশ্য যেন পুরো জেলাকে এক অপূর্ব রূপকথার রাজ্যে পরিণত করেছে।
পাহাড়ে দিন শুরু হয় সমতলের আগে আবার সন্ধ্যা নামে নিত্যদিনে মতো আগেভাগেই। মাঝে মাঝেই মেঘের রাজ্যে ডুব দিয়ে আসা যায়। মেঘের রাজ্যে ডুব দেওয়ার জন্য কত সময়, কত অর্থ ব্যয় করে হিমালয়ের পাদদেশ কাঠমান্ডুতে কিংবা মালয়েশিয়ার গেনটিং হাইল্যান্ডে ভ্রমণ করে থাকি ঠিক সেই অনুভূতি পেতে বান্দরবান একটি অন্যতম গন্তব্য।
এ জেলার আরেকটি বিশেষ দিক হলো নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্য। মারমা, বম, ম্রো, ত্রিপুরা, খুমিসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে। তাদের সংস্কৃতি, উৎসব, পোশাক ও জীবনযাত্রা পর্যটকদের কাছে ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা এনে দেয়। এছাড়া বান্দরবানের স্বর্ণমন্দির, রাজবাড়ি ও বুদ্ধধাতু জাতি, ধর্মীয়, ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

বান্দরবানের যোগাযোগব্যবস্থা ও পর্যটন অবকাঠামো পূর্বের তুলনায় কিছুটা উন্নত হয়েছে। বিদেশি পর্যটকদের ব্যাপারে সরকারের নীতিগত কিছু বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও বছরের প্রায় সবসময় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড়ে মুখর থাকে এই পাহাড়ি জেলা।
বাংলাদেশের অন্য কোনো জেলায় এত বেশি জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট একসঙ্গে পাওয়া যায় না। রুমা, থানচি, আলীকদমের ঝরনাগুলো প্রত্যেকটি জায়গা নিজের মতোই আলাদা পর্যটন গন্তব্য হিসেবে গড়ে তুলেছে। বহু নৃ-গোষ্ঠীর একসঙ্গে বসবাস করার কারণে পর্যটকদের মধ্যে এক ধরনের কালচারাল ট্যুরিজমের অভিজ্ঞতা দেয়।
বাস্তবিকভাবে উপলব্ধি থেকে অনুভব করছি, বান্দরবান শুধু একটি জেলা নয়—এ যেন প্রকৃতির এক জীবন্ত পর্যটন কেন্দ্র। তাই ‘বান্দরবান যেন পুরো জেলাটাই একটা টুরিস্ট স্পট’—এই বক্তব্য একেবারেই যথার্থ ও বাস্তবভিত্তিক।
পরিশেষে বলা যায়, বান্দরবান হচ্ছে প্রকৃতির পর্যটন স্বর্গ।
মো. কামরুল ইসলাম : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, ঢাকা পোস্ট
