মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম না থাকায় সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে পারছেন ক্রেতারা

খেত থেকে সংগ্রহ করা নানা ধরনের সবজি আর ফলের সমাহার নিয়ে বসেছেন কৃষকরা। নিরাপদ পদ্ধতিতে উৎপাদন করা এসব কৃষিপণ্য সরাসরি ভোক্তার হাতে তুলে দিচ্ছেন তারা। সতেজ ও নিরাপদ সবজি পেয়ে খুশি ক্রেতাও।

প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের উল্টো দিকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পাশে সেচ ভবন প্রাঙ্গণে এমন দৃশ্য দেখা যায়। এ বাজারে কৃষক শুধু উৎপাদনকারীই নন তিনি নিজেই বিক্রি করেন পণ্য। এজন্য বাজারটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘কৃষকের বাজার’। নেই কোনো মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম। তাই দামও সাশ্রয়ী।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের বিধিনিষেধেও চলছে কৃষকের এ বাজার। ক্রেতা ও বিক্রেতার উপস্থিতিও রয়েছে বেশ। মূলত এ বাজারের নিয়মিত কিছু ক্রেতা রয়েছেন। যারা এখান থেকেই বাজার করেন। সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার সকাল থেকেই ক্রেতার উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মতো।

জানা গেছে, দেশ বিদেশের প্রচলিত অপ্রচলিত সব ধরনের নিরাপদ সবজি রাজধানীবাসীর হাতের নাগালে পৌঁছে দিতে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে কৃষকের বাজার পরিচালনা করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষি বিপণন অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে এ বাজারে  ঢাকার আশপাশের জেলার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য এনে বিক্রি করেন। তবে দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চল থেকেও অনেক কৃষক পণ্য নিয়ে আসেন এ বাজারে।

গত এক বছর ধরে নিয়মিত এ বাজারে পণ্য বিক্রি করেন হবিগঞ্জের কৃষক বদু মিয়া। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, দূর থেকে আসতে অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু বাজার শুরু হওয়ার আগের দিন ক্রেতারা ফোন দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আনতে বলেন। দীর্ঘ দিন ধরে এ বাজারে বসি তাই ক্রেতার সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো হয়েছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে শুরু করে অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার কাছ থেকে নিয়মিত সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য কেনেন। সবার সঙ্গে আন্তরিকতার বন্ধন তৈরি হয়ে গেছে। আমার কাছ থেকে সতেজ পণ্য কিনে ক্রেতারাও অনেক খুশি।

কৃষকের বাজারে আকার ও মানভেদে কেজিপ্রতি শসা ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, কাঁচামরিচ ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা, ঝিঙে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, লতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, তুরমুজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কালো তরমুজ ৩৫ থেকে ৫০ টাকা, সৌদির সাম্মাম ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা, কাঁচা আম ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও আলু, বেগুন, লাউ, চিচিংগা, কাঁকরোল, মিষ্টি কুমড়া, টমেটোসহ নানা ধরনের সবজি ও কৃষিপণ্য পাওয়া যাচ্ছে। রয়েছে সুস্বাদু আচারসহ মুখরোচক বিভিন্ন খাদ্যপণ্য।

কৃষি বিপণন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. রাশেদ খান ঢাকা পোস্টকে জানান, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে বিধিনিষেধ থাকায় বিক্রি কিছুটা কম। তারপরও বলবো ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উপস্থিতি অনেক বেশি। অন্যান্য সময় শুক্রবারে ৩ লাখ টাকার উপরে কৃষিপণ্য বিক্রি হতো। এখন প্রায় ২ লাখের মতো হয়। আর শনিবারে আগে ১ লাখ টাকার মতো বিক্রি হতো। এখন প্রায় পৌনে এক লাখ টাকার মতো বিক্রি হচ্ছে।

এ কর্মকর্তা বলেন, ভোক্তাদের কাছে স্বল্পমূল্যে নিরাপদ সবজিসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্য পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ। ঢাকার আশপাশে যেমন মানিকগঞ্জ, সাভার, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্য নিয়ে আসার জন্যে কৃষকদের পরিবহন সুবিধা দেওয়া হয়। এতে সহজেই কৃষকেরা তাদের পণ্য নিয়ে আসতে পারেন।

এ বাজার থেকে নিয়মিত কেনাকাটা করেন রাজধানীর বনানীর বাসিন্দা আবু তালেব। তিনি বলেন, এ বাজারের পণ্য কিনে আমি তৃপ্ত। একে তো নিরাপদ, তার ওপর খেতেও সুস্বাদু। আমার মতে, এসব বাজার রাজধানীর বিভিন্ন বড় বড় পয়েন্টে করে দেওয়া উচিত। তাহলে ভোক্তারা আরও সহজে পণ্য কিনতে পারবেন। বিশেষ করে বিধিনিষেধের সময় ভ্রাম্যমাণ পদ্ধতিতে পণ্য বিক্রি অব্যাহত রাখলে ক্রেতার সুবিধা হবে।

একে/এসকেডি