দেশে গত ১০ বছরে ডেইরি শিল্পে অভূতপূর্ব সাফল্য ধরা দিয়েছে। দিনের পর দিন প্রসারিত হওয়া এ শিল্পে কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে দুধের উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে এখনও চাহিদা অনুযায়ী দুধ উৎপাদনে পিছিয়ে রয়েছে দেশ।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১০ বছরের ব্যবধানে দেশে প্রায় সাড়ে চার গুণ দুধের উৎপাদন বেড়েছে। আর চাহিদা বিপরীতে দুধের ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ মেট্রিক টন। কৃষি অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আগামীতে ঘাটতি পূরণ হয়ে দেশে দুধ উদ্বৃত্ত থাকবে। 

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৩.৭০ লাখ টন। ২০১০-১১ অর্থবছরে দাঁড়ায় ২৯.৫০ লাখ টনে। ২০১০-১২ অর্থবছরে ৩৪.৬০ লাখ টন, ২০১২-১৩’তে ৫০.৭০ লাখ টন, ২০১৩-১৪’তে ৬০.৯২ লাখ টন, ২০১৫-১৬’তে ৭২.৭৫ লাখ টন, ২০১৬-১৭’তে ৯৪.১ লাখ টন, ২০১৮-১৯’তে ৯৯.২৩ লাখ টন এবং ২০১৯-২০’তে ১ কোটি ৬.৮০ লাখ টন দুধ উৎপাদন হয়। 

বছরে দুধের চাহিদা ১ কোটি ৫২.০২ লাখ টন

চাহিদার হিসাবে বলা হয়েছে, প্রতিদিন জনপ্রতি ২৫০ মিলিগ্রাম ধরে বর্তমানে বছরে দুধের চাহিদা ১ কোটি ৫২.০২ লাখ টন। গত ২০১৯-২০ সালে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৬.৮০ লাখ মেট্রিক টন। এ হিসাবে বছরে দুধের ঘাটতি ৪৫.২২ লাখ টন। 

তবে সময়ের ব্যবধানে এ ঘাটতির পরিমাণ কমে আসবে বলেই দাবি সংশ্লিষ্টদের। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর মনে করে বছরে দেশে প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ টন দুধ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। 

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ও কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান মনে করেন, আগামী ২০৩১ সাল নাগাদ দেশে উৎপাদিত দুধ উদ্বৃত্ত থাকবে। ফলে সে সময়ে রফতানির সম্ভাবনাও দেখা দেবে। 

২০৩১ সাল নাগাদ দেশে উৎপাদিত দুধ উদ্বৃত্ত থাকবে

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী দুধের উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু আশার আলো হচ্ছে আগামী ২০৩১ সাল নাগাদ মোট দুধের উৎপাদন হবে প্রায় ২ কোটি টন। ওই সময়ে চাহিদার চেয়ে প্রায় তিন লাখ টন দুধ উদ্বৃত্ত থাকবে। 

তিনি বলেন, আর ২০৪১ সাল নাগাদ ৩ কোটি টন দুধ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময়ে দেশে দুধ উদ্বৃত্ত থাকবে প্রায় ৫৩ লাখ টন। ৯০-এর দশকে দুধ উৎপাদনের বৃদ্ধির হার ২ শতাংশ ছিল। বর্তমানে তা বেড়ে উৎপাদন বৃদ্ধির হার প্রায় ১৪ শতাংশ রয়েছে, যোগ করেন এ কৃষি অর্থনীতিবিদ। 

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের খামার শাখার সূত্র জানায়, এক থেকে দুইটা গাভী নিয়ে শুরু করা খামারি হিসেবে দেশে প্রায় ১৪ লাখ ডেইরি খামার রয়েছে। যারা শুধু তালিকাভুক্ত। ৫ বছর আগে এ সংখ্যা ছিল প্রায় ১২ লাখ। 

আর সরকারিভাবে নিবন্ধিত খামারের সংখ্যা প্রায় ৬৬ হাজার। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সরকারিভাবে নিবন্ধন করতে হয়। কমপক্ষে ১০টা গাভী নিয়ে শুরু করা খামারগুলোকেই নিবন্ধন করা হয়। বিভিন্ন শ্রেণিভাগে এসব খামার নিবন্ধিত করা হয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের খামার শাখার সহকারী পরিচালক এ বি এম খালেদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশে প্রায় ২ কোটি ৪৬ লাখ গবাদি পশু আছে। গাভীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ। এরমধ্যে বর্তমানে শুধু দুধ দেয় এমন গাভীর সংখ্যা প্রায় ৮৬ লাখ।

সংখ্যা নয় মূলত গাভীর দুধের উৎপাদনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা জানান, দেশে বর্তমানে শংকর জাতের (দেশি ও বিদেশী জাতের ক্রস) গাভীর সংখ্যা অনেক বাড়ছে। আগে যেখানে দুই থেকে তিন শতাংশ ছিল, বর্তমানে তা প্রায় ৪৬ শতাংশে ঠেকেছে। এসব শংকর জাতের প্রতিটি গাভী গড়ে সাড়ে ৬ থেকে ৭ লিটার দুধ দেয়। আর পূর্বে দেশি একটা গাভী থেকে দুধের উৎপাদন হতো এক থেকে দুই লিটার। এখন তা বেড়ে দুই থেকে সাড়ে তিন লিটারে পৌঁছেছে।

কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের (সাভার) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফিরোজ আহমেদ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশে শুধু দুধের উৎপাদন বাড়ছে তা নয়, এর সাথে বাড়ছে কর্মসংস্থান। এ খাতে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। ডেইরি শিল্প এখন দেশে অনেক বড় উদীয়মান শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বড় বড় বিনিয়োগ করছে এ খাতে। ফলে ডেইরি শিল্প আরও প্রসারিত হবে।

একে/এইচকে