আসছে রয়্যাল এনফিল্ডের ই-বাইক
রয়্যাল এনফিল্ড- এই নামের সঙ্গে মিশে আছে রাজকীয় লুক, আইকনিক এক্সহস্ট সাউন্ড এবং শতাব্দীর পুরোনো ঐতিহ্য। কিন্তু এই ঐতিহ্যবাহী বাইকটি যখন নীরবে ছুটে বেড়াবে, তখন কেমন হবে? এবার রোমাঞ্চকর এমন ঘটনাই বাস্তবে রূপ দিতে চলেছে এই ব্রিটিশ-ভারতীয় খ্যাতনামা মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারী সংস্থা। দীর্ঘদিন ধরে পেট্রোল বাইকের বাজারে দাপট দেখানোর পর ব্র্যান্ডটি তাদের সাব-ব্র্যান্ড ‘ফ্লাইং ফ্লি’ এর মাধ্যমে ইলেকট্রিক ভেহিকল (EV) লঞ্চ করতে যাচ্ছে; যা বাজারে দুই চাকার জগতে নতুন বিপ্লব ঘটাতে প্রস্তুত।
এই বছর শুরু থেকেই রয়্যাল এনফিল্ডের ইলেকট্রিক বাইক নিয়ে গবেষণার খবরে উচ্ছ্বাস ছিল তুঙ্গে। অবশেষে কোম্পানি ঘোষণা করে তাদের প্রথম ই-বাইক 'Flying Flea C6'। এটি মূলত শহুরে রাইডারদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। C6 মডেলটি ২০২৬ সালের প্রথম দিকে ভারতীয় বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে লঞ্চ করা হবে বলে জানা গেছে। বাইকটির প্রথম প্রদর্শনী ও পরীক্ষা ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। C6-এর পরে এই লাইনআপে আরও একটি নতুন মডেল, S6 যোগ করা হবে, যা সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রা দেবে। যদিও নতুন ইভি ব্র্যান্ডের কার্যক্রম ও ডিলারশিপ নেটওয়ার্ক নিয়ে এখনও সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেনি রয়্যাল এনফিল্ড।
বিজ্ঞাপন
'Flying Flea C6'-এর ডিজাইনে রয়্যাল এনফিল্ড তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক স্টাইলকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। এটিতে সেই চিরায়ত বৃত্তাকার LED লাইটিং রাখা হয়েছে, যা রেট্রো এবং আধুনিকতাকে ফুটিয়ে তুলবে। বাইকটি এর ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে স্লিম ফ্রেম, অ্যালুমিনিয়াম চ্যাসিস এবং গার্ডার ফর্ক দিয়ে তৈরি, যা চল্লিশের দশকের ভিনটেজ বাইকের নকশার স্মৃতি জাগায়। এছাড়াও, এতে দেখা যায় স্প্লিট সীট কনফিগারেশন এবং কালো অ্যালয় হুইলস। বাইকটির সুবিন্যস্ত বডিতে ব্যবহৃত হয়েছে ম্যাগনেসিয়াম কেসিং, যা এর ভেতরের এয়ারফ্লো নিয়ন্ত্রণ করে।
বিজ্ঞাপন
বাইকটির সুনির্দিষ্ট স্পেসিফিকেশন এখনও গোপন রেখেছে সংস্থাটি। তবে, এটিকে শহুরে রাইডিংয়ের কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, একবার সম্পূর্ণ চার্জে এটি প্রায় ১০০ কিলোমিটার রেঞ্জ দিতে সক্ষম হবে।আর বাইকটির ওজন ১০০ কেজির কম রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যাতে শহুরে রাস্তায় এটি চালানো হালকা ও সুবিধাজনক হয়।
রয়্যাল এনফিল্ডের ইলেকট্রিক ভেহিক্যালসের প্রধান গ্রোথ অফিসার মারিও আলভিসির দাবি, এটি রয়্যাল এনফিল্ডের প্রোডাকশন লাইন থেকে আসা বাইকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফিচার-সমৃদ্ধ হবে। বাইকটিতে একটি গোলাকার টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে থাকবে, যা ভয়েস কন্ট্রোল, কানেক্টিভিটি এবং অন্যান্য ফাংশন পরিচালনা করবে। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে সমর্থন দিতে কোম্পানিটি কোয়ালকমের (Qualcomm) স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর ব্যবহার করেছে।
এই নতুন সাব-ব্র্যান্ডের নামটিও এসেছে ইতিহাস থেকে। ১৯৪০-এর দশকে রয়্যাল এনফিল্ডের 'Flying Flea' মডেলটি ছিল এক যুগান্তকারী নকশা। সেই সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এই বাইকটি হালকা ও সহজে ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় দ্রুতই বেসামরিকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সেই ঐতিহাসিক মডেলের নামেই নতুন করে ইলেকট্রিক সাব-ব্র্যান্ড তৈরি করেছে কোম্পানিটি।
এ প্রসঙ্গে রয়্যাল এনফিল্ড তাদের সাব-ব্র্যান্ডের সাইটে জানিয়েছে, চল্লিশের দশকের সেই অগ্রণী চেতনাকে এবার হালকা এবং টেকসই ভবিষ্যতের দিকে বহন করে নিয়ে যাওয়াই তাদের পরিকল্পনা।
বাংলাদেশে কবে আসতে পারে?
বাংলাদেশে রয়্যাল এনফিল্ডের পেট্রোল বাইক ইতোমধ্যেই জনপ্রিয়। তবে কোম্পানির ইলেকট্রিক মডেল এখনো এখানে বিক্রয় শুরু করেনি। বাংলাদেশের রয়্যাল এনফিল্ডের পরিবেশক কোম্পানির এক সূত্র ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছে, এখনও এ বিষয়ে ওপর থেকে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে আমরা এই নতুন ই-বাইকটি নিয়ে অবগত। যদি এটি বাংলাদেশের বাজারে আসে, আশা করা যাচ্ছে আগামী বছরের মাঝামাঝির দিকে আসবে।
ডিএ