দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এড়াতে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে দেশের বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সসহ সংশ্লিষ্টদের জন্য নতুন নির্দেশনা দিতে যাচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

বেবিচকের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সরকার থেকে বিদেশি সব যাত্রীর ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের কথা বলা হলেও বর্তমানে তা সম্ভব নয়। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ধারণক্ষমতাও অনেক কম। তবে শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশ থেকে যারা আসবেন তাদের জন্য ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হবে। অন্যান্য দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশনা দেওয়া হবে। হোম কোয়ারেন্টাইন তদারকির জন্যও একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। শিগগিরই এসব নির্দেশনা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে বলেও জানিয়েছে ওই সূত্র।

সূত্রটি আরও জানায়, বিমানবন্দর ও ফ্লাইটের ভেতর সব যাত্রীকে মাস্ক পরতে হবে। এছাড়া যেসব উড়োজাহাজের প্রতি সারিতে তিনটি করে আসন রয়েছে, সেই ফ্লাইটের মাঝখানের আসনের যাত্রীকে মাস্কের পাশাপাশি বাধ্যতামূলক ফেস শিল্ড পরতে হবে।

আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে ওয়াইড বডি বা বড় আকারের এয়ারক্রাফটকে আগে সর্বোচ্চ ৩০০ যাত্রী নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে তাদের ২৬০ যাত্রী বহনের নির্দেশনা দেওয়া হবে।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, 'আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। প্রাথমিকভাবে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলো শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।’

‘প্রাথমিকভাবে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখব। অন্য কোনো দেশের যাত্রীদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম করা যায় কি না, তাও পর্যবেক্ষণ করা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার এ এইচ এম তৌহিদ উল-আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এ ধরনের লিখিত নির্দেশনা পেলেই বেবিচক প্রজ্ঞাপন জারি করে কার্যকরের সময় নির্ধারণ করে দেয়। বেবিচকের নির্দেশনা পেলে যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে।’

সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনাগুলো হলো-

১. সব ধরনের জনসমাগম (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) সীমিত করতে হবে। উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হলো। বিয়ে/জন্মদিনসহ যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে;

২. মসজিদসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে;

৩. পর্যটন/বিনোদন কেন্দ্র সিনেমা হল/থিয়েটার হলে জনসমাগম সীমিত করতে হবে এবং সব ধরনের মেলা আয়োজন নিরুৎসাহিত করতে হবে;

৪. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না;

৫. সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতে আন্তঃজেলা যান চলাচল সীমিত করতে হবে; প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে হবে;

৬. বিদেশ হতে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক (হোটেলে নিজ খরচে) কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে;

৭. নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী খোলা/উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনপূর্বক ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে; ওষুধের দোকানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে;

৮. স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো মাস্ক পরিধানসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে;

৯. শপিং মলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে;

১০. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাদরাসা, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে;

১১. অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা/আড্ডা বন্ধ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ১০টার পর বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে;

১২. প্রয়োজনে বাইরে গেলে মাস্ক পরিধানসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক পরিধান না করলে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;

১৩. করোনায় আক্রান্ত/করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যদেরও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে;

১৪. জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠান শিল্প কারখানাগুলো ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে হবে। গর্ভবতী/অসুস্থ/বয়স ৫৫-ঊর্ধ্ব কর্মকর্তা/কর্মচারীর বাড়িতে অবস্থান করে কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে;

১৫. সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে;

১৬. সশরীরে উপস্থিত হতে হয় এমন যেকোনো ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে;

১৭. হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি মানুষের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে;

১৮. কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন সর্বদা বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ১৮১ জন। এটিই দেশে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের ঘটনা। গত বছরের ২ জুলাই দেশে করোনায় চার হাজার ১৯ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। এতদিন সেটিই ছিল একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা। 

এদিকে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৪৫ জন। এনিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল আট হাজার ৯৪৯ জনে। গত বছরের ২৮ আগস্টের পর এটিই দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা।

এআর/জেডএস