বেতন কাটার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না করায় বিমানের সঙ্গে করা দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বাইরে ফ্লাইট না চালানোর সিদ্ধান্ত নেন পাইলটরা। এর ফলে তৈরি হওয়া সংকটের কারণে সোমবার (২৫ অক্টোবর) রাতে বিমানের কাতার ও দুবাইসহ বেশ কয়েকটি রুটের ফ্লাইট দেরিতে ছাড়ে।

অবশেষে আজ নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন পাইলটরা। আজ থেকে নিয়মিতভাবে অতিরিক্ত ডিউটি করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) একটি সূত্র এবং বিমান কর্তৃপক্ষ ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বিমানের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে পাইলটদের কথা হয়েছে। তিনি পাইলটদের বেতন সমন্বয়ের বিষয়ে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন। তাই পাইলটরাও চুক্তির বাইরে গিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে রাজি হয়েছেন।

গত বছর দেশে করোনাভাইরাসের মহামারি শুরুর পর ব্যয় সংকোচন করতে অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্দিষ্ট হারে পাইলটদেরও বেতন কাটছিল বিমান কর্তৃপক্ষ। তবে এ বছরের জুলাইয়ে অন্যদের বেতন সমন্বয় করলেও পাইলটদের বেতন কেটেই যাচ্ছিল বিমান। এরপরই চুক্তির বাইরে ফ্লাইট চালাতে অস্বীকৃতি জানান পাইলটরা। তবে সে সময় বিমান কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তারা। 

তবে সোমবার রাত থেকে আবারও অতিরিক্ত ফ্লাইট চালাতে অস্বীকৃতি জানান পাইলটরা।

গতকাল সোমবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২৫ ফ্লাইটটি সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাতারের দোহায় যাওয়ার কথা ছিল। স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৪০ মিনিটে দোহা পৌঁছানোর কথা ছিল । 

তবে ফ্লাইট ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে একজন পাইলট নিজেকে ‌‘সিক’ (অসুস্থ) ঘোষণা করে ফ্লাইট চালাতে অস্বীকৃতি জানান। পরবর্তীতে তিনি ফ্লাইট পরিচালনা করেননি। নতুনভাবে অন্য পাইলটকে দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকা ছেড়ে যায়।

ঘটনার সূত্রপাত হিসেবে ওই সময় পাইলটরা জানান, ২০২০ সালের মে থেকে তাদের বেতন ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ১৩ জুলাই বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) জিয়াউদ্দীন আহমেদের একটি অফিস আদেশে সংস্থাটির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। কিন্তু পাইলটদের বেতন কাটার বিষয়টি বহাল থাকে। এরপর থেকেই ক্ষুব্ধ হন তারা। 

বেতন সমন্বয় না হলে বিমানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত ঘণ্টা ফ্লাইট পরিচালনা না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা। আন্দোলনের কারণে সৌদি আরবের দাম্মাম, কাতারের দোহা, আবুধাবি ও দুবাই রুটে ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে বিমানের আশ্বাসে তারা সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছিলেন।

পাইলটদের বেতন কাটার হিসাব

বিমানের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব ককপিট ক্রুর (পাইলট অন্তর্ভুক্ত) চাকরির বয়স ৫ থেকে ১০ বছর, এ বছরের জুলাই থেকে তাদের বেতনের ৫ শতাংশ এবং যাদের চাকরির বয়স ১০ বছর বা এর ঊর্ধ্বে তাদের ২৫ শতাংশ বেতন কাটা হয়।

তবে যেসব ককপিট ক্রুর চাকরির বয়স শূন্য থেকে পাঁচ বছর তাদের কোনো বেতন কাটা হয় না।

এআর/ওএফ/জেএস