প্রায় ৫০ মিনিট ধরে বিমান উপরে ওঠানামা করেছে। বিমান নিয়ে একবার উপরে উঠেন, একবার নিচে নামেন পাইলট। প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিচ্ছিল। ঝাঁকুনির পর ঝাঁকুনি। এক কথায় একটা হরিবল এক্সপেরিয়েন্স। তবে বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেনের অত্যন্ত দক্ষতার কারণে আমরা নিরাপদে নেমে আসতে পেরেছি।

এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতার কথা ঢাকা পোস্টকে বলছিলেন ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বিজি৬১৭ ফ্লাইটের যাত্রী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এস এম নোমান খালেদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, বিমান যখন চট্টগ্রামের আকাশে তখনই জানতে পারি বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার নোজ করছে না। বিমান নামতে পারবে না। তখন বিমানের পাইলট হঠাৎ উপরে উঠেন, আবার হঠাৎ নিচে নামেন। আমার যতটুকু মনে পড়ে, এভাবে অনেকবার চেষ্টা করেছেন ল্যান্ডিং গিয়ার ফ্রি করার জন্য।

ডা. নোমান বলেন, এমন ওঠানামার সময় বিমানের ভেতরে কি অবস্থা হতে পারে তা অনুমান করে নেন। বর্ণনা করে বোঝানো যাবে না।

তিনি বলেন, আমার যতটুকু মনে পড়ছে, তিন থেকে চারবার বিমানটি ল্যান্ডিং করার চেষ্টা করেছে। তবে কেউ কেউ বলছে পাঁচবার চেষ্টা করেছে। ল্যান্ডিং করতে না পেরে আবার উঠে যান। তারপর উপরে ঘুরতে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিতে থাকেন পাইলট। মারাত্মক অবস্থা। এ অবস্থায় বিমানের যাত্রীদের অবস্থা বুঝে নেন।

চমেকের এ অধ্যাপক বলেন, আমরা বিমানের এ অবস্থা বুঝতে পারছিলাম। পাইলট বিমানের পরিস্থিতি আমাদের জানিয়েছেন। ছোট ছোট করে সব ধরনের তথ্য আমাদের জানিয়েছেন। যাত্রীরা বিষয়টি বুঝতে পারেন। সবাই তখন দোয়া-দরুদ পড়ছিলেন। যাত্রী সিচুয়েশন বুঝতে পেরেছে। এটা না জানার মতো জিনিস না। ৫০ মিনিটের মতো একটা ফ্লাইট উপরে উঠছে, নিচে নামছে, প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিচ্ছে। ঝাঁকুনির পর ঝাঁকুনি দিচ্ছে। বিমান কাত হয়ে যাচ্ছে।

যখন বিমান রানওয়েতে নামে তখন কি অবস্থা হয়েছিল? জানতে চাইলে তিনি বলেন, তখন সবাই সতর্ক ছিল। এটা ইমার্জেন্সি ক্রাশ ল্যান্ডিং। স্বাভাবিক ল্যান্ডিং না। কিছুটা ঝাঁকি দিয়েছে।

বিমানের পাইলটের প্রশংসা করে এ চিকিৎসক বলেন, বিমানের পাইলট অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বিমানটি অবতরণ করিয়েছেন। অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন পাইলট রুবায়েত। এমন পরিস্থিতিতে ভয়বাহ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে আমরা নিরাপদে বাসায় আসতে পেরেছি। আল্লাহর রহমত ছিল আর পাইলট অত্যন্ত দক্ষতা ও সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন।

বিমানের যাত্রীদের প্রশংসা করে ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, বিমান উপরে-নিচে যেভাবে ওঠানামা করেছে, যেভাবে ঝাঁকুনি খেয়েছে সেই পরিস্থিতি হজম করার মানসিক শক্তি একটা বিরাট জিনিস।

জানা গেছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বিজি৬১৭ ফ্লাইটে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সংসদ ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী, সরকারি কর্মকর্তাসহ ৪২ জন যাত্রী ছিলেন।

কয়েকজন যাত্রী বলেন, পাইলটের দক্ষতায় প্রাণে বেঁচে গেছেন তারা। যাত্রীরা বলছেন, তিনবারের চেষ্টায় যখন বিমানটি ল্যান্ড করতে পারেনি তখন বিমানের ভেতরে অনেকেই কান্নাকাটি করেছে। পাইলট সবাইকে সাহস দিয়েছেন, নিজে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বিমানটি অবতরণ করিয়েছেন।

বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এম জে শরীফ সাংবাদিকদের জানান, কয়েকজন সেন্সলেসের মতো ছিল। সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী এমপিকেও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

বুধবার রাত ৭টা ৪৭ মিনিটে ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় বেশ কয়েকবার চট্টগ্রামের আকাশে চক্কর দেয় বিমানের ফ্লাইটটি। পরে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে কয়েকবারের চেষ্টায় চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে বাংলাদেশ বিমানের বিজি৬১৭ ফ্লাইট। বিমানটিতে পাইলটসহ মোট ৪৭ জন ছিল বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার ফরহাদ হোসেন খান ঢাকা পোস্টকে বলেছেন, ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের আকাশে আসার পর চাকায় সমস্যা পাচ্ছিল। প্রায় ৫০ মিনিটের মতো চক্কর দিয়ে বিমানটি শেষ পর্যন্ত নিরাপদে অবতরণ করে।

কয়বারের চেষ্টায় বিমানটি নামতে পেরেছে- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে নামার সময় অনেক ধরনের প্রিপারেশন থাকে। তারা কয়েকবার চেক করেছে, বিভিন্ন ম্যানুয়াল দেখেছে। ল্যান্ডিং গিয়ারটি স্বাভাবিক হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই অবতরণ করেছে। যাত্রীরা মোটামুটি সবাই চলে গেছেন।

কেএম/এসএসএইচ