ডিউটি শেষে বিশ্রাম, বিশ্রামের পর অফিসে হাজিরা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলটদের। উপস্থিতির বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত করতে পাইলটদের গেটের সামনের ফেইস আইডি মেশিনে নিজের চেহারা দেখাতে হবে।

এবারই প্রথম পাইলটদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এতো কঠোর হয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। 

রোববার (২ জানুয়ারি) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রশাসন পরিদফতর থেকে এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করা হয়। আদেশটি স্বাক্ষর করেন বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) জিয়াউদ্দীন আহমেদ। 

আদেশে তিনি বলেছেন, ‘নির্বাহী পদে দায়িত্ব পালনকারী পাইলটদের ফ্লাইট ডিউটি সম্পন্ন শেষে বেইজে আসার নিয়ম অনুযায়ী বিশ্রাম নিয়ে যথাসময়ে অফিসে উপস্থিত থাকতে হবে এবং ফেইস আইডি মেশিনের মাধ্যমে হাজিরা নিশ্চিত করতে হবে।’ 

আদেশটি অবিলম্বে কার্যকরের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

বিমানের সব পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক (জিএম), উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম), ব্যবস্থাপক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সব ইনচার্জদের এই চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। 

বিমানের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সম্প্রতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলটদের মধ্যে অফিসের উপস্থিতিতে অনীহা দেখা গেছে। এছাড়াও করোনা পরিস্থিতিতে বেতন কর্তন, পরবর্তীতে সমন্বয় না করা নিয়ে পাইলটদের একাধিকবার আল্টিমেটাম দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকবার পাইলটরা প্রয়োজনের সময় ফ্লাইট পরিচালনায় অস্বীকৃতিও জানিয়েছেন। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিমান, নষ্ট হয়েছে সুনাম। পাইলটদের আচরণে নিয়মশৃঙ্খলার অভাব দেখা গেছে। তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বিমান বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার মধ্যে পাইলটদের অফিসে উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করা অন্যতম।

এদিকে পাইলটদের কর্তন করা বেতন সমন্বয়সহ তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে কয়েকমাস ধরে আন্দোলন করেছিলেন পাইলটরা। সেই আন্দলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিমানের সিনিয়র পাইলট ও তাদের পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান। ২০২১ সালের নভেম্বরে তাকে চাকরিচ্যুত করে বিমান। ঠিক কি কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে সেটি সুনির্দিষ্ট করে না জানালেও, অনেকেই বলেছেন বিমানের ক্ষতি করায় তাকে সরানো হয়েছে।

পাইলটদের সঙ্গে বিমানের দূরত্ব শুরু হয় ২০২০ সালে। সে বছরের মে মাস থেকে বিমানের পাইলটদের তাদের বেতন ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে ২০২১ সালের ১৩ জুলাই বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) জিয়াউদ্দীন আহমেদের একটি অফিস আদেশে সংস্থাটির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। কিন্তু পাইলটদের বেতন কাটার বিষয়টি বহাল থাকে। এরপর থেকেই ক্ষুব্ধ হন পাইলটরা। 

বেতন সমন্বয় না হলে বিমানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত ঘণ্টা ফ্লাইট পরিচালনা না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা। আন্দোলনে সৌদি আরবের দাম্মাম, কাতারের দোহা, আবুধাবি ও দুবাই রুটে ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তবে বিমানের এমডির আশ্বাসে তারা সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন। বেতন সমন্বয় না করায় অক্টোবর মাসে আবারো কর্মবিরতির ডাক দেন তারা। অনিশ্চয়তায় পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইট। বিমানের কোটি কোটি টাকার বিক্রিত টিকিট ফেরত দেন যাত্রীরা।

এআর/জেডএস