জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ না করায় ওয়ালিদ নিহাদ নামে এক ছাত্রকে হলের একটি কক্ষে ডেকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারসহ সাত দফা দাবি উত্থাপন করেন তারা।

দাবির মধ্যে রয়েছে- জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক মামলা, হলের টর্চার সেল বন্ধ, নিহাদের যাবতীয় চিকিৎসা খরচ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন, র‍্যাগিং বন্ধের জন্য অ্যান্টি র‍্যাগিং সেল গঠন, সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং রাজনৈতিক অপতৎপরতা ও বাধ্য করার সংস্কৃতি বন্ধ করা। 

দাবি আদায় ও এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, আগামীকাল (বুধবার) সন্ধ্যায় নজরুল ভাস্কর্যে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে আমরণ অনশনে যাবেন তারা। 

মঙ্গলবার (১ মার্চ) দুপুর ২টায় শতাধিক শিক্ষার্থী হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হল প্রভোস্ট, হাউজ টিউটর ও অন্যান্য শিক্ষকরা তাদের সাথে কথা বলতে আসেন।

 

আন্দোলনকারীরা বলেন, তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তার প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা নেই। কেননা এ ক্যাম্পাসে সব ঘটনা তদন্ত কমিটির নিচেই চাপা পড়ে যায়। আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। হয় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিন, নয়তো সন্ত্রাসীদের বহিষ্কার করুন। 

এ ছাড়া লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের সব ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। 

এ সময় শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ইতোমধ্যেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং কমিটি তদন্ত কাজ শুরু করে দিয়েছে। তিনদিন সময়ের আগেই আমরা সকল কাজ শেষ করে ফেলব। তোমরা আমাদের প্রতি আস্থা রাখো। উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর স্যার দেশের বাইরে আছেন। তিনি আসলেই আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। 

তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগী ছাত্র নিহাদের চিকিৎসার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখছে। আমরা সার্বক্ষণিক তার চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখছি। 

এদিকে ওই শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদারকে প্রধান করে এ কমিটি করা হয়। কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান ও ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তপন কুমার সরকার। 

এদিকে, ওয়ালিদ নিহাদকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরাও তাদের দায় এড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একটি লিখিত দিয়েছেন। যেখানে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা হয়েছে বলেও জানান অভিযুক্তরা। 

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিবের অনুসারী। তবে রাকিবের দাবি, তার কোনো কর্মী এ ঘটনার সাথে জড়িত নয়। 

এর আগে, ছাত্রলীগের কোরাম রাজনীতি না করায় রোববার দিনগত রাতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ওয়ালিদ নিহাদকে মারধরের ঘটনা ঘটে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। পরদিন সকালে নিহাদকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

উবায়দুল হক/আরআই