জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ওয়ালিদ নিহাদকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে শিক্ষার্থীরা। 

ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বিকেল ৩টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচে অনশনে বসে সহপাঠী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে পঞ্চাশোর্ধ শিক্ষার্থী অংশ নেন। পরে বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষক ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আগামী রোববার (৬ মার্চ) পর্যন্ত অনশন স্থগিত করেন তারা। 

অনশন চলাকালে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য- দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর জালাল উদ্দীন, প্রক্টর প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, ছাত্র উপদেষ্টা ড. তপন কুমার সরকার, লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনাবিদ্যা বিভাগের প্রধান আজিজুল হকসহ শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ এবং বিভাগের শিক্ষকরা। 

বিভাগের শিক্ষকরা তাদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের আন্দোলন সুশৃঙ্খল ও যৌক্তিক। এ আন্দোলনের সাথে আমরা একাত্মতা পোষণ করে এসেছি। আমরা দেখছি তদন্ত কমিটি অত্যন্ত পরিশ্রম করে প্রতিবেদন তৈরি করছেন। সুতরাং প্রশাসন আমাদের দাবি পূরণ করবে বলে আমরা আশ্বস্ত হতে পারি। তাই তোমাদের অনুরোধ করছি, তোমরা আজকের মতো অনশন কর্মসূচি রোববার পর্যন্ত স্থগিত করো।  

এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ড. তপন কুমার সরকার বলেন, আমরা আমাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। আশা করি আজকেই রেজিস্ট্রার বরাবর জমা দেওয়া হবে। আমরা চেষ্টা করেছি একটি যথার্থ প্রতিবেদন তৈরি করতে।

তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য ও প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে একটি পক্ষপাতহীন তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছি। আজ জমা দেব। উপাচার্য এসে সিদ্ধান্ত নিবেন। 

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, নিহাদ যেদিন নির্যাতিত হলো তার পরদিন থেকেই আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমরা সাতটি দাবি তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। কিন্তু ঘটনার চতুর্থ দিনে এসেও প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করা ছাড়া দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ জন্যই আমাদের দাবি আদায়ে আমরা অনশন কর্মসূচি শুরু করি। তবে প্রশাসন শেষবারের মতো রোববার পর্যন্ত সময় চেয়েছে এবং দাবি আদায় না হলেও তারা আন্দোলনে যোগ দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। সে জন্য তাদের আশ্বাসে আমরা অনশন স্থগিত রেখেছি।  
    
এর আগে, গতকাল বুধবার ক্যাম্পাসের নজরুল ভাস্কর্যের পাদদেশে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করা হয়। এ ছাড়া প্রথমদিন থেকেই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ওই শিক্ষার্থীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবের গ্রুপের রাজনীতি না করায় এই মারধরের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ তোলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ওয়ালিদ নিহাদ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষে ১৫ জন মিলে এ ঘটনা ঘটায় বলে জানান তিনি। পরদিন সকালে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

উবায়দুল হক/আরআই