বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি নির্বাচন-২০২২ এ আজমতগীর-জাফর ‘ঐক্য প্যানেল’ ২৬টি ইশতেহার ঘোষণা করেছে। শনিবার (৫ মার্চ) বিকেলে ঢাকা কলেজের টিচার্স লাউঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব ইশতেহার ঘোষণা করেন।

ইশতেহার ঘোষণা করেন মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের অধ্যক্ষ ও প্যানেলের মহাসচিব পদপ্রার্থী সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ জাফর আলী। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি ক্যাডার সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী সংগঠন নিজেদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতৃত্বের সংকট, দীর্ঘ ছয় বছরের অচলাবস্থা, ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর স্বার্থে সংগঠনকে কুক্ষিগত করার অপচেষ্টা, ঐক্য এবং অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার অভাবে আমরা কাঙ্ক্ষিত অর্জন থেকে বঞ্চিত রয়েছি।

তিনি আরও বলেন, এসডিজি-২০৩০ অর্জন ও ভিশন-২০৪১ এর উন্নত বাংলাদেশের যোগ্য নাগরিক সৃষ্টিতে শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কারের নেতৃত্বে শিক্ষা ক্যাডারকে নিয়ে আসার বিকল্প নেই। শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় সার্বিক সহায়তা দেওয়ার জন্য শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের অগ্রণী ভূমিকা পালনের ক্ষেত্র প্রস্তুতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা ২৬টি ইশতেহার ঘোষণা করেছি। সেগুলো হলো-

১. শিক্ষা ক্যাডারের সমস্যা সমাধানে সবার মতামতের উপর ভিত্তি করে অগ্রাধিকার বিবেচনায় ১০০ দিনের কর্মসূচি প্রণয়ন।

২. ২০১৫ সালে পে-স্কেল আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত কোর কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পদ আপগ্রেডেশন ও পদ সৃষ্টির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা।

৩. যথাসময়ে পদোন্নতি নিশ্চিতকল্পে ১৯৮৭ সালের সমীক্ষা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পদ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা।

৪. পদোন্নতির শর্ত পূরণকারী সব সদস্যের অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক পদে দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা নেওয়া।

৫. একজন ক্যাডার কর্মকর্তা তার চাকরির অন্যান্য শর্তপূরণ সাপেক্ষে পাঁচ বছর পূর্তিতে ৬ষ্ঠ গ্রেডে উন্নীত হওয়ার বিষয়ে
কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

৬. জেলা পর্যায়ে শিক্ষা ক্যাডারের প্রশাসনিক পদ সৃষ্টি করে উপ-পরিচালকের (কলেজ) অফিস স্থাপন। পদ সৃষ্টির পূর্ব পর্যন্ত সরকারি কলেজের সঙ্গে আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয় থেকে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা করা।

৭. শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য পূর্ণগড় বেতনে অর্জিত ছুটি নিশ্চিতকরণে ব্যবস্থা নেওয়া।

৮. অধ্যক্ষদের জন্য প্রাধিকারভিত্তিক গাড়ি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং প্রতিটি জেলায় শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের জন্য ডরমিটরি স্থাপন।

৯. আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের কর্মস্থলে এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া।

১০. জাতীয় নির্বাচন ও পাবলিক পরীক্ষাসহ অন্যান্য সরকারি দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করা।

১১. শিক্ষা ক্যাডারের স্বার্থে পেশাগত আন্দোলনের কারণে হয়রানিমূলক বদলিসহ অন্যান্য সব ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।

১২. বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের আড়াই সহস্রাধিক কর্মকর্তার বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির স্থবিরতা অবসানের বিষয়টি ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তকরণ।

১৩. একটি সমন্বিত বদলি নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া; সিঙ্গেলম্যান ডিপার্টমেন্ট, পাহাড়ি এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও অন্যান্য দুর্গম এলাকা এবং উপজেলা পর্যায়ের কলেজে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের ৩ বছর পরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জেলা শহরের কলেজ অথবা কাঙ্ক্ষিত স্টেশনে পদায়নের বিষয়টি নিশ্চিতকরণ।

১৪. বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মোবাইল ভাতা, ইন্টারনেট ভাতা, রেফারেন্স বুক ভাতা বরাদ্দ দেওয়া।

১৫. সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ অন্যান্য ছুটির দিনে শিক্ষা বোর্ডে ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ করা।

১৬. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারারসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের পদায়ন।

১৭. সরকারি কলেজসমূহকে সেন্টার অব এক্সিলেন্স এ উন্নীত করার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের একটি অংশ বরাদ্দের দাবি উত্থাপন।

১৮. সরকারি কলেজে গভর্নিং বডি গঠন সংক্রান্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের সংশ্লিষ্ট অংশ বাতিলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া।

১৯. শিক্ষা ক্যাডারে মহিলা সহকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সমস্যাসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং নারীবান্ধব কর্ম পরিবেশ নিশ্চিতকরণ।

২০. চাকরির শুরুতেই মানসম্মত বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ এবং পেশাগত উন্নয়নের লক্ষ্যে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য স্টাফ কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া।

২১. শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের আপদকালীন সহায়তা দেওয়া এবং সেবামূলক কাজের পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিসিএস শিক্ষা
ক্যাডার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট গঠন।

২২. প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ ক্যাডার সিডিউলভুক্ত অন্যান্য পদ পুনরুদ্ধার, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর,
বিএমটিটিআই এর পদসমূহ ক্যাডার সিডিউলভুক্ত করার লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

২৩. ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স-এ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের অবস্থান নিশ্চিতকরণে আলোচনা এবং প্রয়োজনে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া।

২৪. কর্মজীবন পরিকল্পনার সঙ্গে পদসোপানের সমন্বয় ঘটিয়ে শিক্ষা ক্যাডারকে একটি আকর্ষণীয় ক্যাডারে পরিণত করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো।

২৫. শিক্ষা ক্যাডারের দাবি ও প্রস্তাবনাসমূহ উপস্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্যোগ নেওয়া।

২৬. ajmotgirjafar@gmail.com ই-মেইল আইডিতে শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের মতামত, পরামর্শ, অভিযোগ, সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে তথ্য নেওয়া এবং সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।

এছাড়াও শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের জন্য সম্মানজনক আসন ব্যবস্থা এবং কর্ম সহায়ক অফিস সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ও প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর। 

তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল ও পিএইচডি কোর্সে আসন সংরক্ষণ, আর্থিক সহায়তায় ‘উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা ফান্ড’ গঠন ইত্যাদি বিষয় নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কাছে দাবী উত্থাপনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণায় ঐক্য প্যানেল কাজ করে যাবে। আমরা সম্মানিত সাধারণ সদস্যদের সমর্থন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাডারের দাবি আদায় নিশ্চিত করতে চাই। ঐক্য প্যানেল নির্বাচনে জয়ী হয়ে শিক্ষা ক্যাডারের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সব বৈরিতা অবসানের লক্ষ্যে কাজ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

আরএইচটি/আইএসএইচ