নির্যাতনের অভিযোগ করে হলে ঢুকতে পারছেন না ঢাবি শিক্ষার্থী
নির্যাতনের শিকার ঢাবি শিক্ষার্থী আবু তালিব/ছবি : ঢাকা পোস্ট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ‘মিনি গেস্টরুমে’ নির্যাতনের শিকার অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী আবু তালিব আজও হলে উঠতে পারেননি। গত শুক্রবার থেকেই হলের বাইরে অবস্থান করছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) আবু তালিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, তদন্ত কমিটির সদস্য হলের আবাসিক শিক্ষক আমাকে বলেছেন 'মিউচুয়াল করে দিই তুমি হলে থাকো।' আমি স্যারকে জানিয়েছি, হলে থাকলে গেস্টরুম প্রোগ্রাম করতে পারব না এবং বৈধভাবে থাকতে চাই। কিন্তু স্যার আমাকে বলেছেন, এখানে থাকতে হলে এগুলো একটু করতে হবে। থার্ড-ফোর্থ ইয়ারে এগুলো কমে যাবে।
বিজ্ঞাপন
আবু তালিব আরও বলেন, হলে থাকতে চাই তবে আমি ছাত্রলীগের কোনো প্রোগ্রাম গেস্টরুমে করব না এটা লিখিত দিতে হবে। বৈধ সিট দিতে হবে। প্রভোস্ট পরিবর্তন হলেও এটা যেন বহাল থাকে।
তিনি বলেন, নির্যাতনকারীদের পক্ষ থেকে হলের সিনিয়ররা আমাকে হুমকি দিচ্ছে যাতে আমি বিষয়টি মিউচুয়াল করে নিই। বিষয়টা নিয়ে যেন আর কিছু না বলি। তানাহলে ‘আমি মাদক গ্রহণ করি’ এ মর্মে মামলা দেবে। এছাড়া আমার পরিবারের সদস্যদেরও অপমান করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে নির্যাতনে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। কমিটির প্রধান আবাসিক শিক্ষক ড. মো. আবদুস সোবহান তালুকদার (উপল তালুকদার)। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই শিক্ষার্থী যদি নিয়ম মেনে হলে থাকতে চায় কিংবা উঠতে চায়, সে ক্ষেত্রে বিষয়টি যেন আমাকে অথবা প্রভোস্টকে জানায় সেটা বলেছি। সেটি বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আর সেটা অসম্ভবও নয়। হলে উঠলে কোনো ছাত্রনেতা বা কেউ তাকে নির্যাতন করবে বলে আমার মনে হয় না।
আবু তালিবকে হলে তোলার কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারা এটি নিয়ে কাজ করছেন। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে হল সূত্র জানিয়েছে, যে রুমে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আবু তালিব, সেখানে ১৪ জন শিক্ষার্থী থাকেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেছে তদন্ত কমিটি। তবে আলাদা আলাদা নয়, সবার সঙ্গে একসঙ্গে কথা বলা বলেছেন কমিটির সদস্যরা। সবাইকে লিখিত মতামত দিতে বলা হয়েছে। সেখানে হলের সিনিয়র যারা নির্যাতনকারীদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত তাদের পরামর্শ অনুযায়ী লিখিত মতামত লিখে তদন্ত কমিটিকে দেওয়া হয়েছে।
কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। তিনি (আবু তালিব) বলেন, সবাইকে একসঙ্গে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে ভয়ে কেউ সত্য বলবে না। সিনিয়ররা যেটা লিখে দিয়েছে সেটাই তারা তদন্ত কমিটিকে দিয়েছে। এখানে সত্য ফুটে উঠবে না। এছাড়া যেখানে তদন্ত কমিটির সদস্যরাই আমাকে মিউচুয়াল করতে বলছে, সেখানে বুঝা যাচ্ছে রিপোর্ট কেমন হতে পারে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু হলের ২০১ (ক) নম্বর কক্ষে আবু তালিবকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে একই হলের ২০১৮-১৯ সেশনের চার ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। তারা হলেন, সমাজকল্যাণ বিভাগের শেখ শান্ত আলম, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ইমদাদুল হক বাঁধন, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শাহাবুদ্দিন ইসলাম বিজয় ও আইন বিভাগের নাহিদুল ইসলাম ফাগুন।
এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। ড. উপল তালুকদার ছাড়াও আবাসিক শিক্ষক ড. সাইফুল হক, ড. আব্দুল খায়ের এবং তানজিল শাহ তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন।
এইচআর/এসকেডি