ভেড়ার মাংসে পরিবর্তন আসছে স্বাদ-গন্ধে, বাড়ছে পরিমাণও
ভেড়ার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও গুনগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৃদ্ধির জন্য গবেষণা শুরু করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আল মামুন। তার গবেষণায় ভেড়ার রক্তে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে ৭ শতাংশ। দুই দশক ধরে গবেষণা করে ভেড়ার মাংসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধকরণে অবশেষে সফলতা পেলেন তিনি।
রোববার (২২ মে) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের সম্মেলন কক্ষে ‘অধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ভেড়ার মাংস’ শীর্ষক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান গবেষক ড. আল মামুন।
বিজ্ঞাপন
গবেষক জানান, বিশ্বব্যাপী ভেড়ার মাংসের জনপ্রিয়তা থাকলেও এক ধরনের অস্বাভাবিক গন্ধের কারণে বাংলাদেশে ভেড়ার মাংসের প্রতি মানুষের অরুচি দেখা যায়। এ ছাড়া ঘন শক্তপেশী ও অধিক চর্বিযুক্ত হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষই পছন্দ করেন না ভেড়ার মাংস।
বিভিন্ন গবেষণা প্রবন্ধের তথ্য মতে, বিশ্বে শতকরা ২২ ভাগ প্রোটিনের চাহিদা মেটায় ভেড়ার মাংস। তাই ভেড়ার খাদ্যতালিকায় ঔষুধিগুণ সম্পন্ন প্লানটেইন ঘাস ও রসুনের পাতার ব্যবহার করে ভেড়ার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মাংসের গুনগত মানও উন্নত করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
পাশাপাশি ঔষধি ঘাসের উপাদান মাংসের স্বাদ ও গন্ধের পরিবর্তন এনেছে। প্লানটেইন ও রসুন পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভেড়ার বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মাংসের গুনগত মানের ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে।
তিনি আরও জানান, গবেষণা চলাকালীন ভেড়ার খাবারে অধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ প্লানটেইন ঘাস ও রসুনের পাতা ব্যবহার করে এ ফলাফল পেয়েছেন। এ দুটি উপাদান ব্যবহার করার ফলে ভেড়ার ২০ থেকে ২৬ শতাংশ শারীরিক বৃদ্ধি, ৫ থেকে ৭ শতাংশ মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ৭ শতাংশ রক্তের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ ছাড়া এর ফলে শরীরের অভ্যন্তরীণ চর্বি এবং পেলভিক চর্বি যথাক্রমে ২৪ শতাংশ এবং ৫৬ শতাংশ কমে গিয়েছে। উপাদান দুটি ব্যবহারের ফলে ভেড়ার মাংসে ১৫ শতাংশ কোলেস্টরল কমিয়ে দিয়েছে এবং ৩০ শতাংশ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ঘাসসমূহ ব্যবহারে ভেড়া থেকে ১১ থেকে ১৪ শতাংশ কম মিথেন নির্গত হয় যা পরিবেশে খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
অধ্যাপক ড. আল মামুন ২০০৪ সালে জাপানের ইয়াতো ইউনিভার্সিটিতে প্লানটেইন ঘাসের ওপর গবেষণা শুরু করেন। গবেষণায় সাফল্যের জন্য তিনি সেখানে প্রেসিডেন্ট ও ডিন অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন।
কর্মশালায় পশুপুষ্টি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. রাখী চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন। অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া।
মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর/আরআই