চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রী হেনস্তার ঘটনার জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। শুক্রবার (২২ জুলাই) সভাপতি অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সজীব কুমার ঘোষ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে তারা উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত বলে জানান।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ১৭ জুলাই (রোববার) রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। 

বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান চর্চা ও জ্ঞান সৃষ্টির জায়গা। নিরাপদ ও ভয়হীন পরিবেশ জ্ঞান চর্চার পূর্বশর্ত। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উদ্ভূত পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। সমিতি বিশ্বাস করে এই ব্যাপারে প্রশাসন যথেষ্ট সক্ষম, আন্তরিক এবং আশা করে অতি অল্প সময়ে অপরাধীরা আইনের আওতায় আসবে। এই ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো প্রকার গাফিলতি ও ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা শিক্ষক সমাজ মেনে নেবে না।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মানসম্মত শিক্ষা ও শিক্ষার বিস্তারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ বজায় আছে। দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা আমাদের বিচলিত করলেও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে কোনোভাবেই অপরাধীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত করতে দিব না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বরাবরের মতো শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করে যাবে। 

এই জাতীয় অপরাধ নির্মূলে শিক্ষক সমিতি আইন প্রয়োগের পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য অধিকহারে মুক্তবুদ্ধির চর্চা, সাংস্কৃতিক চর্চা ও সুস্থ বিনোদনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করছে। এই ব্যাপারে শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এবং সার্বিক পরিবেশ উন্নয়নে যেকোনো প্রকার সহযোগিতার হাত বাড়াতে প্রস্তুত রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, শিক্ষার্থী, প্রশাসন, অভিভাবক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।

এর আগে গত রোববার (১৭ জুলাই) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হল সংলগ্ন এলাকায় ৫ জন দুর্বৃত্তের হাতে শারীরিক হেনস্তার শিকার হন এক ছাত্রী। ওই সময় সঙ্গে থাকা তার বন্ধুকেও মারধর করা হয়। ছিনিয়ে নেওয়া হয় মোবাইল ফোন। পরে এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দিলে ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

যৌন নিপীড়নের এ ঘটনার জেরে ছাত্রীদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এরই মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রীদের হলে প্রবেশের ব্যাপারে সময়সীমা বেঁধে দেয়। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন করে ক্ষোভ দেখা দেয়। ছাত্রী হেনস্তা এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বৃহস্পতিবার দিনভর শিক্ষক, সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ এবং প্রগতিশীল ছাত্রজোট মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

রুমান হাফিজ/আরআই