প্রতীকী ছবি

স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্ন নিয়ে একজন শিক্ষার্থী পা রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নানা সঙ্কট আর সমস্যা অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় এই শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণের পথে।

ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন ১৮ হাজার শিক্ষার্থী। এরমধ্যে আবাসনের সুযোগ পান মাত্র দুই হাজার শিক্ষার্থী। ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর বাকি ১৬ হাজারের যাদের পরিবার ঢাকাতে থাকে না তাদের থাকতে হয় মেসে। বছরজুড়েই নানা সঙ্কটে থাকা এই শিক্ষার্থীরা আরও বিপাকে পড়েছেন মূল্যস্ফীতির কারণে। ফলে বাবা-মায়ের কাছ থেকে পাওয়া সীমিত অর্থ বা টিউশনি করে আয় করা অর্থ দিয়ে যারা টেনেটুনে চলে যাচ্ছিলেন তারা এখন ঢাকায় থাকার খরচ জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ ক’জন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, তারা অধিকাংশই টিউশনির ওপর নির্ভর করে তাদের পড়াশোনার খরচসহ জীবনযাপনের অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করেন। কিন্তু জীবনযাপনে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অনেক অবিভাবক তাদের সন্তানদের গৃহশিক্ষক কমিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ আয়ের একমাত্র পথটা হারিয়েছেন এই গৃহশিক্ষকরা।    

আরও পড়ুন : খরচ বাঁচাতে খাওয়া কমিয়েছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল মমিন বলেন, নানা সংকট মোকাবিলার কথা মাথায় রেখে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সব সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রধান মৌলিক চাহিদা খাদ্যই এখন আমার মতো অনেক শিক্ষার্থীর জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পুষ্টিকর খাবার বাদই দিলাম, তিনবেলা পেট ভরে খাওয়াটাই এখন অনেকের চিন্তার কারণ। একদিকে যেমন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, অন্যদিকে টিউশনিও কমছে। সব মিলিয়ে ঢাকা শহরের মতো ব্যয়বহুল শহরে টিকে থাকাটাই এখন স্বপ্নের মতো হয়ে গেছে। মেস ভাড়া, বুয়া বিল,পানি বিল, বিদ্যুৎ বিল, খাবার খরচ পোষাতে গিয়ে অনেকে এখন ঢাকা শহরে বৃক্ষের হলুদ পাতার মতো টিকে আছে, হালকা বাতাসেই নিমিষেই ঝরে পড়বে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার পর থেকেই পুরোনো ঢাকার একটা মেসে থাকছি। আগে দুইটা টিউশন করিয়ে নিজের খরচ নিজেই বহন করতাম। কিন্তু যে বাসায় টিউশনি করাতাম তাদের জীবনই এখন আর চলে না, কিভাবে তার সন্তানের টিউশনি চালাবে? তাই এখন একটি টিউশনি হওয়ায় ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। দুই তিন মাস আগে মেস ভাড়া, খাওয়ার খরচ মিলিয়ে মাসে ৬-৭ হাজার টাকা প্রয়োজন হতো। কিন্তু এখন ৮ হাজারের বেশি চলে যায়। তাই সব সময় চিন্তার ভিতরে থাকতে হচ্ছে, এতে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে।  

বিশ্ববিদ্যালয়টির মাস্টার্সের আরেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া খানম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক সংকট বড় সমস্যা। ১৭ বছর পর আমাদের জন্য একটি হল হলেও তাতে জায়গা হয়েছে এক চতুর্থাংশ শিক্ষার্থীর। বাকি শিক্ষার্থীরা থাকছেন মেসে। মেসে থাকাটা আমাদের মতো নারী শিক্ষার্থীদের জন্য যে কতটা কষ্টকর, তা যারা না থেকেছে তারা বুঝবে না। আমি গত পাঁচ বছর হলো মেসে থাকি। পড়াশোনার পাশাপাশি একটা টিউশন করে নিজের খরচ চালিয়ে নিচ্ছি। মেসে থেকে আসলে পড়াশোনা করা কঠিন। মেসের ভাড়া, বাজার করা, রান্না করা এসব বিষয় আমাদের ওপর শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবে ফেলছে। 

আরও পড়ুন : ওষুধের দাম বাড়াতে আবারও ‘তোড়জোড়’

বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোশফিকুর রহমান ইমন বলেন, অনেক আশা নিয়ে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু যে পরিমাণে খরচ হচ্ছে থাকা খাওয়ায়, তা কৃষক বাবার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। এদিকে প্রতিনিয়ত সব কিছুর দাম বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া আরও কঠিন হয়ে যাবে।

শিক্ষার্থীদের এসব সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমান সময়ে যে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে, তার প্রভাব পড়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই। বিশেষ করে শিক্ষা খাতে এর প্রভাব ব্যাপক আকার ধারণ করছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাই আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলব মহামারি করোনার সময় শিক্ষার্থীদের পাশে যেভাবে বৃত্তিসহ নানা  পদক্ষেপ নিয়ে দাঁড়িয়েছিল, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে তা আবার নেওয়া যায় কি না। আর আমি সরকারকেও বলব জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে একটু বিশেষ মনযোগ দিতে হবে। এ সময়ে যদি সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে হয়তো অনেক শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা শেষ করা কষ্টকর হয়ে যাবে।

এনএফ