ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৫৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারের সমাবর্তনকে ঢাবির ইতিহাসের বৃহত্তম বলে জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করবেন রাষ্ট্রপতি ও ঢাবির চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ। নোবেল বিজয়ী ফরাসি অর্থনীতিবিদ ড. জ্যঁ তিরোল সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লস ডিগ্রি প্রদান করা হবে।

শনিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সমাবর্তন আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এ সমাবর্তনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গ্র্যাজুয়েট অংশগ্রহণ করবেন। ৫৩তম সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য ৩০ হাজার ৩শ ৪৮ জন গ্র্যাজুয়েট ও গবেষক রেজিস্ট্রেশন করেছেন। তাদের মধ্যে ২২ হাজার ২৮৭ জন ঢাবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মূল অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকবেন। তাছাড়া অধিভুক্ত সাত কলেজের ৭ হাজার ৭৯৬ জন সমাবর্তনে অংশ নেবেন।

এর আগে সবচেয়ে বেশি গ্রাজুয়েট অংশ নিয়েছিলেন ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ৫১তম সমাবর্তনে। সেবার ২১ হাজার ১১১ জন গ্রাজুয়েট রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। ২০১৯ সালে ৫২তম সমাবর্তনে অংশ নিয়েছিলেন ২০ হাজার ৭৯৬ জন গ্র্যাজুয়েট। এছাড়া ২০১৭ সালে ১৭ হাজার ৮৭৫ জন, ৪৯তম সমাবর্তনে ৬ হাজার ১০৪ জন ও ৪৮তম সমাবর্তনে অংশ নিয়েছিলেন ৮ হাজার ৩১২ জন গ্র্যাজুয়েট।

এবারের সমাবর্তনে ১৩১ জন কৃতী শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ১৫৩টি স্বর্ণপদক দেওয়া হবে। যা ঢাবির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে ৫২তম সমাবর্তনে ৯৮টি, ৫১তম সমাবর্তনে ৯৬টি, ৫০তম সমাবর্তনে ৯৪টি, ৪৯তম সমাবর্তনে ২৯টি ও ৪৮তম সমাবর্তনে ৩৩টি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। এছাড়া এবার ৯৭ জনকে পিএইচডি, ২ জনকে ডিবিএ এবং ৩৫ জনকে এম ফিল ডিগ্রি প্রদান করা হবে।

ঢাবি গ্র্যাজুয়েট ও উপাদান-কল্প কলেজ/ইনস্টিটিউটের গ্র্যাজুয়েটদের সমাবর্তনের মূল ভেন্যু ঢাবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। আর অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের গ্র্যাজুয়েটরা ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজ ভেন্যু থেকে সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করবেন। বেলা ১১টা ৫৫মিনিটে চ্যান্সেলরের শোভাযাত্রা এবং ১২টায় সমাবর্তন শুরু হবে। সিনেট, সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কনস্টিট্যুয়েন্ট কলেজের অধ্যক্ষ/ইনস্টিটিউটের পরিচালকরা সকাল ১১টা ২০মিনিটে সমাবর্তন শোভাযাত্রা আরম্ভস্থল কার্জন হল প্রাঙ্গণে উপস্থিত থাকবেন।

সমাবর্তনে যেসব নির্দেশনা মানতে বলা হয়েছে—

সিনেট, সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কনস্টিট্যুয়েন্ট কলেজের অধ্যক্ষ/ইনস্টিটিউটের পরিচালকরা সকাল ১১টা ২০মিনিটে সমাবর্তন শোভাযাত্রা আরম্ভস্থল কার্জন হল প্রাঙ্গণে উপস্থিত থাকবেন।

১১টার মধ্যে সমাবর্তন স্থলে প্রবেশ করতে হবে:

ঢাবির গ্র্যাজুয়েটরা খেলার মাঠের সুইমিংপুল সংলগ্ন গেইট দিয়ে সমাবর্তন স্থলে প্রবেশ করবেন। তাদের জন্য সকাল সাড়ে নয়টায় গেইট খোলা হবে এবং তারা সকাল ১১টার মধ্যে অবশ্যই সমাবর্তন স্থলে আসন গ্রহণ করবেন। অনুষ্ঠান স্থলে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করার পর কোনক্রমেই মঞ্চের আশেপাশে ও অন্যান্য স্থানে ঘোরাফেরা করা যাবে না। আমন্ত্রিত অতিথিরা সংলগ্ন গেইট দিয়ে সমাবর্তন স্থলে প্রবেশ করবেন। তাদের জন্য সকাল ১০টায় গেইট খোলা হবে এবং তারা সকাল সাড়ে এগারোটার মধ্যে অবশ্যই সমাবর্তন স্থলে আসন গ্রহণ করবেন।

অধিভুক্ত কলেজের সমাবর্তন:

অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, বিভাগীয় প্রধান শিক্ষক পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং রেজিস্ট্রেশন করা গ্র্যাজুয়েটরা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজ ভেন্যু থেকে সরাসরি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। তারা সমাবর্তন স্থলে সকাল ১১টা ২০মিনিটের মধ্যে আসন গ্রহণ করবেন।

যা সঙ্গে আনা যাবে না:

সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণপত্র এবং জাতীয় পরিচয়পত্র/প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আইডি/পাসপোর্ট সঙ্গে আনতে হবে। আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তরযোগ্য নয়। সমাবর্তন স্থলে মোবাইল ফোন, হাতব্যাগ, ব্রিফকেস, ক্যামেরা, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ছাতা ও পানির বোতল নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। সমাবর্তন স্থলে প্রবেশের জন্য মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক।

পার্কিং হবে যেখানে:

সমাবর্তনের দিন ভিআইপি এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের গাড়ি কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ভবন (কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন সায়েন্স এনের ভবন) মাঠে পার্কিং ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া অন্যান্য সকল গাড়ি এসএম হল মাঠ, হক হল মাঠ, মুহসীন হল মাঠ এবং ফুলার রোডে পার্কিং করতে হবে। গ্র্যাজুয়েটদের চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তায় গাড়ি পার্কিং না করার অনুরোধ করা হলো।

সমাবর্তনের দিন ক্যাম্পাসে গণপরিবহন চলাচল বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে উপাচার্য বলেন, সমাবর্তনের দিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত টিএসসি ক্রসিং থেকে দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট থেকে দোয়েল চত্বর এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত রাস্তায় গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সময় সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য ওইদিন বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করা হলো। সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত। সমাবর্তনের দিন নিরাপত্তার স্বার্থে শাহবাগ থেকে টিএসসি-দোয়েল চত্বর হয়ে হাইকোর্ট মোড় পর্যন্ত রাস্তার নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হলো।

সমাবর্তনে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, সমাবর্তনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। সমাবর্তন অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে তিনি ঢাবি পরিবারের সব সদস্য, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র‌্যাব, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ফায়ার সার্ভিস, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সদয় সহযোগিতা কামনা করেন। 

ঢাবির সমাবর্তনের ইতিহাস:

১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাবির অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ব্রিটিশ আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। এরপর ১৯২৪ সাল থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই (সর্বমোট ২৪ বার) সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ আমলে শেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালের ২১ নভেম্বর।

পাকিস্তান আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ। এরপর ১৯৭০ সাল পর্যন্ত আরও ১৫ বার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান আমলে সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭০ সালের ৮ মার্চ। সেটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম সমাবর্তন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো (৪০তম) সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর। এরপর ৪১তম, ৪২তম, ৪৩তম, ৪৪তম, ৪৫তম, ৪৬তম, ৪৭তম সমাবর্তন যথাক্রমে ২০০১, ২০০৪, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১২ ও ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ৫টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে ২০১৪, ২০১৫, ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে।

এইচআর/কেএ