প্রতিবন্ধিতা দমাতে পারেনি রাবির রিফাতকে, হতে চান আইনজীবী
জন্মগতভাবেই দুটি পা অচল। মনের জোরে হুইলচেয়ারে বসে পড়ালেখার হাতেখড়ি। শুধু পা নয়, ডান হাতেও কোনো কাজ করতে পারি না। বাম হাতেই সব কাজ করতে হয় আমাকে। মানুষ নানা কটু কথা বলেছে। নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর মায়ের সহযোগিতায় এখন আমি আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন দেখছি।
কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী রিফাত রহমান। তার বাড়ি চুয়াডাঙ্গার পিটিআই মোড়ে। তার বাবা মো. সাইদুর রহমান ২০১৯ সালে এক দুর্ঘটনায় মারা যান। এখন বাড়িতে মা মোছা. রহিমা খাতুন ও বড় ভাই মো. জুবায়ের রহমান আছেন।
বিজ্ঞাপন
জন্মের পর প্রায় তিন বছর কথা বলতে পারেননি রিফাত। কিন্তু তার মা হাল ছাড়েননি। তিনি রিফাতের কথা বলার জন্য যা করার সব কিছু করেছেন। এখন সে কথা বলতে পারলেও সমস্যা হয়। তাই প্রায় সময় একা কথা বলে জড়তা কাটানোর চেষ্টা করেন।
গ্রামের নীলমণিগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। অষ্টম শ্রেণি ও দ্বাদশ শ্রেণিতে বৃত্তিও পেয়েছেন। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ফলাফলের দিক দিয়ে সবার থেকে এগিয়ে ছিলেন অধম্য এই মেধাবী। পঞ্চম শ্রেণিতে ৬০০ নম্বরের মধ্যে ৫৭৩ নম্বর পেয়ে বৃত্তি পান।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যলয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য অনলাইনে কোচিং করেন রিফাত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় না থাকলেও রাবিতে ১৪৪তম মেধা তালিকা অর্জন করেন। গুচ্ছতে ৬৬ নম্বর পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। সিদ্ধান্ত নেন রাবিতে আইন বিভাগে পড়বেন।
সফলতার বিষয়ে জানতে চাইলে রিফাত বলেন, শারীরিক সমস্যা আমাকে খুব পীড়া দিতো। সমাজের লোকেরাও আমাকে দিয়ে কিছু হবে না বলতেন। এক দিন আমার সামনেই একজন বলল, তুমি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে কি করবে, তোমার বড় ভাই হলে কিছু একটা করতে পারত। আমি কিছু করতে পারব না এটা মেনে নিতে পারিনি। তাই কিছু করার জন্য পড়াশোনা করছি।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহী ধরমপুর এলাকায় মাসহ বাসা নিয়ে থাকি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেকটা দূর হওয়ায় আমার যাওয়া-আসার সমস্যা হয়। অন্যদিকে রাস্তাটাও ভালো না। বাবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মৃত্যুর পর তার পেনশন দিয়েই আমাদের সংসার চলছে। সেই টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা আমাদের জন্য কষ্ট হয়।
দুই সপ্তাহ হলো আমি বৈদ্যুতিক হুইলচেয়ার ব্যবহার করছি। তাতে কিছুটা উপকার হচ্ছে। কিন্তু একাডেমিক ভবনগুলোতে একা যেতে পারি না। কারণ প্রবেশ সিঁড়িগুলো হুইলচেয়ার নিয়ে উঠার মতো চওড়া নয়। তাই ক্লাস করতে আসার সময় বন্ধুদের মাধ্যমে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠি। বন্ধুরা আমাকে ক্লাসে যেতে সাহায্য করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি হলে থাকার ব্যবস্থা করে দেন, তাহলে আমার জন্য খুব উপকার হতো।
স্বপ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মেধা ও ভাগ্যক্রমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাই। তাই স্বপ্ন দেখি এক দিন অনেক বড় আইনজীবী হবো।
আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, তাকে আমি চিনি এবং জানি। এজন্য ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের পর থেকে ব্যক্তিগতভাবে রিফাতের খোঁজ-খবর রাখি। বিভাগের সকলেই যেন তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়, তার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। তার যেকোনো সমস্যা আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখভাল করবো। কারণ সে অনেক মেধাবী। তালিকা থেকে আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছে। আমি তার ভবিষ্যত সফলতা কামনা করছি।
এসপি