বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের (বিজেএস) ১৫তম সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষার মেধাতালিকায় প্রথম হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আশিক-উজ-জামান। এ নিয়ে টানা তৃতীয় বারের মতো সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হলেন রাবির তিন শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন সচিবালয়ের ওয়েবসাইটে সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

১৫তম সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হওয়া রাবির আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আশিক-উজ-জামানের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায়। তিনি উপজেলার বালাভীড় এলাকার মো. আহসান হাবিব ও মোছা. আলাতুন বেগমের দুই সন্তানের মধ্যে ছোট। তার বাবা সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত। তার মা গৃহিণী। বড় বোন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন। বর্তমানে পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকেন।

আশিক-উজ-জামান ২০১৪ সালে রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ এবং ২০১৬ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। অনার্সে ৩.৬৬ পেয়ে বিভাগে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন তিনি।

আশিক-উজ-জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি সফল হয়ে আমার পরিবার এবং শিক্ষকদের গর্বিত করতে পেরেছি- এটাই অনেক ভালো লাগার। আমার সফলতার পেছনে পরিবারের অবদান সবচেয়ে বেশি। বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণায় আমি আজ এই পর্যায়ে এসেছি। শিক্ষকদের অবদানও কোনো অংশে কম নয়। শিক্ষকরা প্রথম বর্ষ থেকে কীভাবে আইন পড়তে হবে তা শিখিয়েছেন। আইনে কোন কোন দিকে ক্যারিয়ার আছে সেগুলোও আমাদের জানিয়েছেন। বিশেষ করে বিভাগের শিক্ষকদের দিক-নির্দেশনা আমাকে এই ফলাফল অর্জনে সহায়তা করেছে। জুডিশিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে অসহায়দের সহযোগিতা করে যাব।

পড়াশোনার বিষয়ে তিনি বলেন, জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় যদি কেউ ভালো করতে চায় তাকে নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। তবে সব কিছু বাদ দিয়ে সাত-আট ঘণ্টা পড়লেই হবে না। দিনে নিয়মিত দুই ঘণ্টা করে পড়লেই হবে। একাডেমিক সিলেবাসের চেয়ে জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষার সিলেবাস যেহেতু সংক্ষিপ্ত হয় এবং একাডেমিক সিলেবাসের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই একাডেমিক পড়া যদি ভালোভাবে শেষ করা যায় তাহলে ভালো করা সম্ভব। মূলত একাডেমিক পড়াটাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। 

আশিক-উজ-জামানের বাবা মো. আহসান হাবিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এই ভালো লাগা আসলে বলে প্রকাশ করার মতো না। আশিক ছোট থেকে নিয়মিত পড়াশোনা করতো। সে ৪র্থ শ্রেণিতে থাকাকালীন প্রথম আলো ভাষা এবং ব্যাকরণ প্রতিযোগিতায় বিভাগের মধ্যে প্রথম হয়। পরে সে ক্যাডেট কলেজে চান্স পায়। সেখান থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হয়। আজ আমার ছেলের জন্য আমি গর্বিত। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগর ঢাকা পোস্টকে বলেন, টানা তৃতীয়বারের মতো আমাদের বিভাগ থেকে বিজেএস পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা প্রথম স্থান দখল করায় আমরা খুবই গর্বিত। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ১৬ জনের নাম আমরা পেয়েছি, যারা এবারের বিজেএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এর বাহিরে আরও থাকতে পারে। বিভাগের শিক্ষকদের প্রচেষ্টা ও নির্দেশনায় এই সফলতা এসেছে। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আশিকের সাফল্য আমাদের বিভাগকে আরও গৌরবান্বিত করেছে।

জুবায়ের জিসান/আরএআর