হল, গ্রন্থাগার বন্ধ থাকায় খোলা আকাশের নিচেই পড়তে হচ্ছে এসব চাকরিপ্রার্থীদের/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

করোনার কারণে দেশের অন্যসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। একাডেমিক কার্যক্রম ও আবাসিক হলের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ও বিজ্ঞান গ্রন্থাগার। এতে বিপাকে পড়ছেন নিয়মিত পড়াশোনা করা কয়েক হাজার চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থী। এদের বেশিরভাগই আগামী ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারিতে অংশ নেবেন।

রোববার (১৪ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাবির বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের বারান্দা এবং খোলা আকাশের নিচে বসে শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার কারণে প্রথমদিকে অধিকাংশ শিক্ষার্থী গ্রামে গেলেও পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে ঢাকায় ফেরেন। এ সময় আবাসিক হল বন্ধ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মেসে উঠে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় না খোলায় একরকম বাধ্য হয়েই তারা খোলা স্থানে সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পড়াশোনা করছেন।

বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের পাশেই খোলা আকাশের নিচে অধ্যয়নরত অবস্থায় পাওয়া যায় ফিন্যান্স বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল মতিনকে। ঢাকা পোস্ট-কে তিনি বলেন, লাইব্রেরি বন্ধ থাকলেও আমাদের না পড়ার তো কোনো সুযোগ নেই। এর মধ্যে আগামী ১৯ মার্চ ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। তাই মশার উপদ্রব, লাইট না থাকা, ওয়াশরুম সমস্যাসহ নানা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও এখানে পড়ছি। তবে সবাই এখানে একসঙ্গে দল বেধে পড়ার কারণে পড়াশোনার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দ রাকিব হোসেন বলেন, হল এবং লাইব্রেরি খুলে ফেলবে, সে আশায় বসে ছিলাম। কিন্তু না খোলায় সমস্যায় পড়ে যাই। এদিকে ১৯ তারিখ পরীক্ষা (৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি)। মেসে পড়া হয় না, এখানে পড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, তাই একটু সমস্যা হলেও ভালো লাগে। তাছাড়া ক্যান্টিনও আছে পাশে ক্ষুধা লাগলে খেয়ে আসি।

সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাসলিমা আক্তার বলেন, লাইব্রেরি না খোলায় এখানে পড়ছি। তেমন সমস্যা হচ্ছে না, এখানে পড়তে ভালো লাগা কাজ করে।

গ্রন্থাগার ভবনের বারান্দায় বসে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন বিসিএসে অংশ নিতে যাওয়া এসব শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রধান গ্রন্থাগারিক অধ্যাপক ড. মো. নাসিরুদ্দিন মুন্সী ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, আমি জেনেছি, সেখানে কিছু শিক্ষার্থী চাকরির জন্য পড়ালেখা করছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। একটি চাকরি তাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের তুলে দিতেও পারছি না।

তাদের জন্য লাইব্রেরি খোলার কোনো সুযোগ আছে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, না! বিশ্ববিদ্যালয় খোলা পর্যন্ত তো সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সঙ্গে সঙ্গে হয় তো লাইব্রেরিও খুলে দেওয়া হবে।

বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের সহকারী গ্রন্থাগারিক জয়নুল আবেদীন বলেন, শিক্ষার্থীরা এখানে পড়ছে, তাদের তো বাধা দিতে পারি না। যদি পারতাম, খুলে দিতাম (লাইব্রেরি)। কিন্তু কেন্দ্রীয় নির্দেশ ছাড়া তো খোলা যাবে না।

এইচআর/এফআর