ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে গত এক বছরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৭ জন শিক্ষার্থী। যার মধ্যে মাত্র চারটি ঘটনায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

একই সময়ে ছাত্রলীগের নির্যাতনে হলছাড়া হয়েছেন ২৬ জন শিক্ষার্থী। এর বাইরে পৃথক ঘটনায় তিনজন সাংবাদিককে হেনস্থার ঘটনাও ঘটেছে।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এসময় এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ‘স্টুডেন্টস এগেন্সট টর্চার-স্যাট’ নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন। 

‘ইনসিওর ডিজিটাল প্রাইভেসি রাইটস’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিশ্লেষণাত্মক বক্তব্য তুলে ধরেন সংগঠনটির হেড অব ডকুমেন্টেশন আহনাফ সাঈদ খান।

স্যাটের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক সনদগুলোতে, যেমন ইউনিভার্সাল ডিক্লেনারেশন অব হিউম্যান রাইটসের পাঁচ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- নাগরিকরা কোনো নির্যাতন, নিষ্ঠুর ও অমানবিক দণ্ডের শিকার হবে না। এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া যেমন রাষ্ট্রের দায়িত্ব, তেমনি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্ব শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো নির্যাতন, নিপীড়ন কিংবা সহিংসতার শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা। 

তিনি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। এই নির্যাতনের হার সবচেয়ে বেশি আবাসিক হলগুলোর অতিথি কক্ষে। যা নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকারকেও হরণ করছে। সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষার্থী নির্যাতনের লোমহর্ষক ঘটনা আমরা সংবাদমাধ্যম মারফত প্রত্যক্ষ করেছি। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

তিনি আরও বলেন, স্যার্ট শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল প্রাইভেসি রাইটস তথা ‘গোপনীয়তার অধিকার’ নিয়ে কাজ করছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে চবি প্রক্টর অফিসে আটকে মোবাইল ফোন চেক করে তাকে পুলিশে দেওয়ার বিরুদ্ধেও সক্রিয় প্রতিবাদ করেছে স্যাট। স্যাট মনে করে যথাযথ কার্যবিধি অনুসরণ করা ব্যতীত কারো ব্যক্তিগত ডিজিটাল ডিভাইস চেক করা একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার লঙ্ঘন। তা কোনো ছাত্রলীগ নেতা করুক কিংবা হল প্রশাসন করুক।

র‍্যাগিং প্রথার বিরুদ্ধে আইন পাশ ও এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়ে সিফাত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আমাদের আহ্বান- শিগগিরই শিক্ষার্থী নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত নির্যাতকদের তদন্তপূর্বক প্রশাসনিক শাস্তি নিশ্চিত করুন এবং গেস্টরুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি প্রাশাসনিক বিধি প্রণয়ন করুন। আমরা উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে এভাবে শিক্ষার্থী নির্যাতন চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে। পড়াশোনার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তারা পাবে না।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্যাটের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক সালেহ উদ্দিন সিফাত, মিডিয়া ডিরেক্টর আনাস ইবনে মুনীর, উইমেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড জেন্ডার এথিক্স স্মৃতি আফরোজ সুমি ও সদস্য সাদিয়া ইয়াসমিন ঐতিহ্য।

এইচআর/কেএ