রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের এক শিক্ষার্থীকে গত এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে একই হলের এক সিনিয়র শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) নির্যাতন সইতে না পেরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়েন বলে জানা গেছে। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) ভর্তি করা হয়েছে। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম সুমাইয়া সুলতানা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম নুরুন্নাহার দোলন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি অত্র হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্মৃতির ইন্ধনে এমন কাজ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, গত ২০ ফেব্রুয়ারি পানি গরম করাকে কেন্দ্র করে ভুক্তভোগী সুমাইয়ার সঙ্গে অভিযুক্ত দোলনের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দোলন রাগান্বিত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে বিষয়টি দোলন ওই দিন রাতেই হলের দায়িত্বরত ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বসেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সবার সামনে ক্ষমা চাইলেও ছাত্রলীগের দায়িত্বরত নেত্রীরা তাকে বিভিন্নভাবে শাসান। এরপর দোলন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্মৃতি রায়ের সহায়তায় প্রভোস্টের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। সাত দিন যাবত ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে রুমে ডাকাসহ বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করেন দোলন ও হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্মৃতি রায়।

মঙ্গলবার অভিযুক্ত দোলনের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অত্র হলের প্রভোস্ট ড. ফারজানা কাইয়ুম কেয়া ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে তার কক্ষে ডাকেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্মৃতি রায় ও অভিযুক্ত দোলন। ভেতরে আলোচনা চলাকালে একপর্যায়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে দ্রুত তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নুরুন্নাহার দোলনকে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোলনসহ অভিযুক্তদের হল থেকে বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রাধ্যক্ষ ফারজানা কাইয়ুম কেয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। 

এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক এম তারেক নূর মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে জেনেছি। ওই শিক্ষার্থীকে চিকিৎসার জন্য রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকেই আমার দপ্তরে ডেকেছিলাম। তাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। নির্যাতনের বিষয়ে যথাযথ প্রমাণ পাওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। 

জুবায়ের জিসান/আরএআর