‘কুংফু ট্রেনিং নেওয়ার পর আমার মনের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি মানোভাবও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার মনে হচ্ছে যে কোনো ধরনের বিপদ আসলে বসে না থেকে প্রতিবাদ করতে পারবো এবং নিজেকে রক্ষা করতে পারবো। আমার মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মেছে যে, আমি নারী, আমিও পারি।’

কথাগুলো বলছিলেন বেগম রোকেয় বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) কুংফু ট্রেনিংরত বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী হ্যাপী আক্তার। চা বিরতির মাঝে কথা তার সঙ্গে। 

তিনি বলেন, আমরা বেশ কিছু দিন ধরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কুংফু ট্রেনিং করছি। এতে আমাদের শারীরিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন নিজেদের ওপর যে কোনো অন্যায় আমরা প্রতিরোধ করতে পারবো।

জানা গেছে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক সংগঠন ‘গ্রীন ভয়েস’র অঙ্গসংগঠন ‘বহ্নিশিখা’ মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে সাত দিনব্যাপী কুংফু প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ জন ছাত্রী প্রশিক্ষণে অংশ নেন। 

সকাল ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, একদল মেয়ে কুংফু প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং একজন প্রশিক্ষক তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রশিক্ষকের দেখানো পদ্ধতিতে মেয়েরা নানা রকম অঙ্গভঙ্গিতে আত্মরক্ষার কৌশল শিখছেন ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল রপ্ত করে নিচ্ছেন।

কুংফু ট্রেনিং নিয়ে মেয়েদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির পাশাপাশি ভয় দূর হচ্ছে। সামাজিক প্রতিকূলতা পেরিয়ে তারা নিজেদের তৈরি করছেন একজন দৃঢ় প্রত্যয়ী নারী হিসেবে।

এ প্রশিক্ষণে বিভিন্ন ধরনের কৌশল শেখানো হয়। যার মধ্যে ইউকোওকে, গেদাম বারাই, আগেওকে, ছোতো ওকে, ইউকো গেরি অন্যতম। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মুক্তা আক্তার বলেন, আমি মনে করি প্রত্যেকটি মেয়েরই এই ট্রেনিং করা দরকার। এর মাধ্যমে আত্মরক্ষা করার কৌশল রপ্ত করা যায়। মনোবলও বৃদ্ধি পায়। এই ট্রেনিং করার আগে আমার সন্ধ্যার পর মেসে যেতে ভয় করতো যে কোন বিপদ হলে নিজেকে কীভাবে রক্ষা করবো। এখন মনে হয় আমি একায় যেতে পারবো। কোনো বিপদ আসলে নিজেকে রক্ষা করতে পারবো।

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান ইসা বলেন, আগে রাস্তাঘাটে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করা হলে আত্মবিশ্বাস না থাকায় কিছু বলতে পারতাম না। এখন আমাদের কেউ উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করলে আমরা তা প্রতিরোধ করতে পারবো।

গ্রীন ভয়েস বেরোবি শাখার সহ-সভাপতি সুরাইয়া আক্তার বলেন, গ্রীন ভয়েসের বহ্নিশিখার আয়োজনে আমরা আত্মরক্ষার কৌশল ও আত্মবিশ্বাস উন্নয়নে প্রশিক্ষণ শুরু করেছি। আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছি। অনেক মেয়েই আছে একা চলতে ভয় পায়। দিনের বেলাতেও  একা বের হতে চায় না। এই ট্রেনিংয়ে বিভিন্ন কৌশল শেখানোর মাধ্যমে তাদের ভয় দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। একজন বিপদে পড়লে যেভাবে তারা নিজেদের বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবে।  অধিকাংশ মেয়েই উত্ত্যক্তের শিকার হলে চুপচাপ চলে যায়, তারা প্রতিবাদ করে না। এই ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে তারা আত্মবিশ্বাসী হবে এবং তারা আত্মরক্ষায় সাহসী ভূমিকা পালন করবে।

রংপুর মাহিগঞ্জ কলেজের শিক্ষক ও রংপুর অঞ্চলের কুংফু মাস্টার এ বি বাবেল বলেন, কুংফু শুধু আত্মরক্ষায় নয়, শারীরিক সুস্থতার জন্যও এর চর্চা করা ভালো। আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি আত্মরক্ষার কৌশল শেখা প্রত্যেক মানুষের জন্য জরুরি। মেয়েদের ক্ষেতে বেশি জরুরি। তারা চলতে ফিরতে নানাভাবে বিপদের সম্মুখীন হয়। আত্মরক্ষার কৌশল শিখে বিপদে তা প্রয়োগের মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কারাতে ট্রেনিং নিচ্ছে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এর আগে উত্তরাঞ্চলে লোকদের মাঝে কুংফু ট্রেনিং নেওয়ার আগ্রহ ছিল না। এখন অনেকেই আগ্রহী হয়ে শিখছে। নিজেদের সন্তানদেরও এই ট্রেনিং নেওয়ায় উৎসাহ দিচ্ছে।

শিপন তালুকদার/আরএআর