‘স্মার্ট সংগঠন বলতে ছাত্রদলকেই মনে করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা’
দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। এ অবস্থায় দলটির ‘ভ্যানগার্ড’ খ্যাত ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ক্যাম্পাসগুলোতে নেই তাদের পদচারণা। পার্টি অফিস কেন্দ্রিক সীমাবদ্ধ তাদের কার্যক্রম। তবে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং নিজেদের অতীত গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য ধরে রাখতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটি।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ছাত্রদলের ভূমিকা, দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না পারা, ডাকসু নির্বাচন, হামলা-মামলাসহ নানা বিষয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের ঢাবি প্রতিবেদক আমজাদ হোসেন হৃদয়
ঢাকা পোস্ট : আপনাদের নেতৃত্বে ছাত্রদল বর্তমানে কতটা ঐক্যবদ্ধ?
বিজ্ঞাপন
ছাত্রদল সভাপতি-সম্পাদক : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল অতীতের থেকে শতভাগ ঐক্যবদ্ধ। আমরা বর্তমানে স্বৈরাচার সরকারের আমলে ছাত্র রাজনীতি করছি। ছাত্রদল দীর্ঘদিন বিরোধী দলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেকোনো সংকটে মজলুমরা ঐক্যবদ্ধ হয়। আমরা সবাই যেহেতু নির্যাতিত, সে কারণে নির্যাতিতদের একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠেছে। এই প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠেছে আদর্শ এবং চাহিদাভিত্তিক। মৌলিক দাবি আদায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলেছে ছাত্রদল।
ঢাকা পোস্ট : বর্তমানে ছাত্রদলের ফোকাসের জায়গা কোনটা?
ছাত্রদল সভাপতি-সম্পাদক : বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বেশি ফোকাসের জায়গা দেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচার সরকারকে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে সরিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার আনা। যার মাধ্যমে দেশের মানুষ নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে এবং তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পায়। সাধারণ মানুষ মৌলিক অধিকার ফিরে পেলে তারই একটি অংশ হবে শিক্ষা। আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ী সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক অধিকার এবং সাধারণ মানুষের যে মৌলিক অধিকার সেটা বাস্তবায়নে আমরা একাট্টা হয়ে আছি।
ঢাকা পোস্ট : ছাত্রদল ছাত্র রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ঢাবি ক্যাম্পাসে অনেকটা নিষ্ক্রিয়, এটা আপনাদের ব্যর্থতা কিনা?
ছাত্রদল সভাপতি-সম্পাদক : ডাকসু নির্বাচন কেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মোটামুটি একটি সহাবস্থান তৈরি হয়েছিল কিন্তু যখনই ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের অধিকার, স্বাধীন মত প্রকাশ, দেশের জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলছে তখনই সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন প্রশাসনের মাধ্যমে বিতাড়নের চেষ্টা করেছে। আমাদের নতুন কমিটি গঠনের পর ক্যাম্পাসে আমাদের মিছিলে ছাত্রলীগ তিন তিনবার হামলা চালিয়েছে। প্রশাসনকে জানানোর পরও প্রতিকার পাইনি। এরপরও বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়েছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দলীয়করণ এর জন্য দায়ী। তবে ছাত্রদল খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট নিরাপত্তা নিয়ে তার আদর্শ বাস্তবায়ন করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাবে এবং আমরা বিশ্বাস করি সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের রাজপথের মিছিলে সম্পৃক্ত হবে।
ঢাকা পোস্ট : ক্যাম্পাস রাজনীতিতে ফিরতে, বিশেষ করে ঢাবিতে নিয়মিত পদচারণায় আপনাদের পরিকল্পনা কী?
ছাত্রদল সভাপতি-সম্পাদক : ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের পদচারণ আছে তবে যখনই ব্যানারসহ ছাত্রদল ক্যাম্পাসে কোনো কর্মসূচি করতে যায় তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মদদে, পুলিশের সহায়তায় ছাত্রলীগ হামলা করে। আমরা বারবার প্রশাসনকে বলেছি প্রত্যেকটি ছাত্র সংগঠনকে রাজনৈতিক আদর্শ বাস্তবায়নে ন্যুনতম স্পেস দেওয়া হোক। ছাত্রদল বৈধ রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিবেশ সৃষ্টি না হয়, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন ব্যাঘাত না ঘটে। তাই প্রশাসনকে আমরা আহ্বান করছি যাতে সুষ্ঠু সমাধানের মাধ্যমে সকল ছাত্র সংগঠন তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারে। যদি ছাত্রলীগকে ছাত্রদলের ওপর হামলা করে, বাধা প্রধান করে সে ক্ষেত্রে ছাত্রদল তার অধিকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আর ছাড় দেবে না। ছাত্রদল তার শক্তিমত্তা প্রদর্শন করে ক্যাম্পাসে পদচারণা করবে।
ঢাকা পোস্ট : ছাত্রলীগ বলছে ছাত্রদল অছাত্রদের সংগঠন- ছাত্রলীগের এ বক্তব্যকে কীভাবে দেখছেন?
ছাত্রদল সভাপতি-সম্পাদক : এই প্রশ্নটা যখন ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে করবেন তখন আপনি সঠিক জবাব পাবেন। গত ডাকসু নির্বাচনে যে প্রক্রিয়ায় ছাত্র নেতারা প্রতিনিধিত্ব করেছে, আমরা একই প্রক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করি। ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃত্বে নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঢাবি ছাত্রত্বটা প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যে প্রক্রিয়ায় ছাত্রত্ব ধরে রাখতে হয়, সে প্রক্রিয়ায় ধরে রেখেছি। ছাত্রলীগ কতটা ছাত্রদের সংগঠন সেটা তাদের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে দেখলে বুঝা যায়। চার বছরের জায়গায় অনার্স শেষ করতে লেগেছে ৭-৯ বছর। উপাচার্য মিডিয়ার সামনে নিজেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ছাত্রদলের সভাপতি শ্রাবণ আমার ছাত্র। সেখানে একটি সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা কী বলল সেটা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা নেই।
এছাড়া ক্যাম্পাসে সহাবস্থান না থাকার কারণে অনেকেই অছাত্রতে পরিণত হয়। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অনেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে না, ছাত্রলীগের হামলা এবং প্রশাসনের গ্রেপ্তারে অনেকের গ্যাপ পড়ে গেছে, ইয়ার লস হয়ে গেছে। এভাবে অন্তত ৫০০ নেতাকর্মী তাদের নিয়মিত ছাত্রত্ব ধরে রাখতে পারছে না। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয় না। বরং তারা শুধুমাত্র ছাত্রলীগের অভিভাবকত্ব পালন করে।
ঢাকা পোস্ট : তারেক রহমান লন্ডন থেকে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে ও লাশ ফেলানোর নির্দেশনা দিচ্ছেন- ছাত্রলীগের এ বক্তব্যের বিষয়ে কী বলবেন?
ছাত্রদল সভাপতি-সম্পাদক : ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে যে লাশ পড়েছে সেটাও কি দেশনায়ক তারেক রহমান নির্দেশনায়! ছাত্রদল যখন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছিল তখনও দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশনা ছিল অস্ত্র তো দূরে থাক, একটা সুই পর্যন্ত থাকতে পারবে না। আমরা কোনো সংঘাত, হানাহানির দিকে যাচ্ছি না। আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রলীগ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বারবার হামলা চালিয়েছে, প্রগতিশীল সকল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর তারা হামলা করেছে। সুতরাং তাদের মুখে এসব কথা মানায় না। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি শৃঙ্খলার দায়িত্ব ছাত্রলীগকে দেওয়া হয়নি, তাদের ইজারা দেওয়া হয়নি। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা হয়ে দাঁড়ালে অচিরেই এই সন্ত্রাসী সংগঠনকে ক্যাম্পাসচ্যুত করা হবে।
ঢাকা পোস্ট : আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের ভূমিকা কী থাকবে, আন্দোলন সংগ্রামের জন্য কতটা প্রস্তুত?
ছাত্রদল সভাপতি-সম্পাদক : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আগামী যে জাতীয় নির্বাচন সে নির্বাচনে দেশের সাধারণ জনগণ নির্ভয়ে যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে তার ব্যবস্থা করার জন্য সমন্বয় সেল গঠন করেছে। মানুষের চাওয়া নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ দিতে হবে। সে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ছাত্রদল সম্পৃক্ত হয়ে আছে। আমরা তৃণমূল নেতাকর্মীদের বার্তা দিয়েছি ছাত্রদলের ইতিহাস ত্যাগের ইতিহাস, ছাত্রদলের ইতিহাস গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। আমরা তাদের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আহ্বান করেছি। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ছাত্রদলের সকল নেতাকর্মী শহীদ হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই যেন রাজপথে আসে। নেতাকর্মীরা আমাদের আশ্বস্ত করেছে তারা গুম, খুন কিংবা শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুত।
ঢাকা পোস্ট : জাতীয় নির্বাচন কিংবা ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিতের দাবিতে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে ঐক্য করার কোনো চিন্তা-ভাবনা আছে কি না ছাত্রদলের?
ছাত্রদল সভাপতি-সম্পাদক : ছাত্রদল জনমানুষের কথা বিবেচনা করেই রাজনীতি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত যেসব ছাত্র সংগঠন মনে করে বর্তমান অগণতান্ত্রিক সরকার দেশ শাসন করছে, ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী কার্যক্রম করছে এবং ঢাবি প্রশাসন শুধুমাত্র ছাত্রলীগের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করছে। সে সঙ্গে দেশের মানুষের ভোটাধিকারের জন্য যে ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে আন্দোলন করতে চায়, ছাত্রদল তাদের সঙ্গে ঐক্য করতে প্রস্তুত। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করে দেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই।
ঢাকা পোস্ট : ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্রদলের ভাবনা জানতে চাই
ছাত্রদল সভাপতি-সম্পাদক : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সবসময় জনগণের ভোটাধিকারকে সম্মান করতে জানে। ৯০ এর ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ছাত্রদল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে। অতীতেও ছিল, সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনেও সীমিত সহাবস্থানের মধ্যেও আমরা অংশগ্রহণ করেছিলাম। যদিও ভীতু হয়ে ছাত্রলীগ এবং প্রশাসন মিলে নির্বাচন কারচুপি করে। যার প্রতিবাদ করেছিল ছাত্রদলসহ সকল ছাত্র সংগঠন। আমরা চাই অবশ্যই নিয়মিত যেন নিরপেক্ষ ডাকসু নির্বাচন হয়। সুষ্ঠুভাবে নিয়মিত যদি ডাকসু নির্বাচন হয় তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।
ঢাকা পোস্ট : ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব স্মার্ট ছাত্রলীগ গঠনে কাজ করছে, আপনাদের ভাবনা কী?
ছাত্রদল সভাপতি-সম্পাদক : ছাত্রদল ১০ বছর আগে যা চিন্তা করে ছাত্রলীগ তা ১০ বছর পরে করে। অবশ্যই ছাত্রদল ছাত্রলীগ থেকে অধিক আধুনিক এবং আধুনিক চিন্তা ধারণ করে। স্মার্ট সংগঠন বলতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলকেই মনে করে। স্বাধীনতার এত বছর পরে এসে তারা অনুধাবন করল যে ছাত্রলীগকে স্মার্ট হওয়া দরকার। আর ছাত্রদল সৃষ্টিই হয়েছে স্মার্ট সংগঠন হিসেবে।
এইচআর/এসকেডি