ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক নেতার মাথা ফেটে যাওয়াসহ প্রায় ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিকার চাইতে ইনানের দ্বারস্থ হলে ফের দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ক্যাম্পাসে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনার প্রতিকার চাইতে শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সৈকতের অনুসারীরা শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের কাছে গেলে ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে ফের দুপক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। 

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ছাত্রলীগের আয়োজিত কনসার্ট শেষে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত চলে যাওয়ার সময় হল কমিটির পদপ্রার্থী ও শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারী গণেশ ঘোষের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে গণেশ সৈকতের কাছে মাফ চাইলে ঘটনা শেষ হয়। তবে সৈকত চলে যাওয়ার পর হল মাঠে ইনান ও সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে মারামারি ও ধাওয়া-পালটা ধাওয়া শুরু হয়। যা রাত ৪টা পর্যন্ত চলে। 

এ ঘটনায় সৈকতের অনুসারী ও কমিটির পদপ্রার্থী অপূর্ব চক্রবর্তী ও শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী শ্রীরুপ কুন্ডুর মাথা ফেটে যায়। এছাড়া আরও ১৩ জন আহত হন। এসময় ঘটনাস্থলে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা ও ছাত্রলীগ জগন্নাথ হল সভাপতি অনতু বর্মন এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। 

তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে আহতরা হলেন- অপূর্ব চক্রবর্তী, কার্তিক কুমার, পল্লব মন্ডল, পলাশ রায়, বর্ষণ রায়, অর্পণ কুমার বাপ্পি ও বিপ্লব পাল। 

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারীদের মধ্যে আহতরা হলেন- শ্রীরূপ কুন্ডু, অপূর্ব, অভি, রিদ্ধি, ধ্রুব, চিন্ময়, প্রিতম অন্যতম।

জানা যায়, আহতরা প্রাথমিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টার থেকে চিকিৎসা নিয়ে হলে ফেরেন। কিন্তু অপূর্ব চক্রবর্তীর মাথা ফেটে যাওয়ায় মাথায় ৮টি সেলাই দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল রাতে জগন্নাথ হলের কনসার্টে মমতাজের গান শেষে সৈকত চলে যাওয়ার পর জুনিয়র কর্মীদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। রাত প্রায় ২টার দিকে সাদ্দাম ও ইনানের অনুসারীরা এক হয়ে সৈকতের অনুসারীদের উপর হামলা করে। হামলার সময় উভয় পক্ষের হাতে হকিস্টিক, জিআই পাইপসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়। এ ঘটনার প্রতিকার চাইতে শুক্রবার বিকেলে তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীরা শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের কাছে গেলে দুপক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয় এবং একপর্যায়ে তা ফের মারামারিতে রূপ নেয়। এতে আরও বেশ কয়েকজন আহত হন। এসময় শেখ ইনান সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলেও জানা যায়। 

সৈকতের অনুসারী ও জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের পদ-প্রত্যাশী নেতা পলাশ রায় সৌরভ বলেন, গতকাল রাতে জগন্নাথ হলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে জুনিয়রদের মধ্যে সমস্যা হয়। পরবর্তীতে তা সিনিয়রদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। এরপর যখন আমরা সৈকত ভাইকে বিদায় দিয়ে ফিরছিলাম, তখন ইনান ভাইয়ের সমর্থকরা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এই হামলায় আমাদের এক প্রার্থীর মাথা ফেটে যায় এবং তার মাথায় ৮টি সেলাই লাগে। 

তিনি বলেন, আমরা ১৫-২০ জন আজ দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে গতকাল রাতের ঘটনা ইনান ভাইকে জানাতে এবং বিচার দিতে গেলে তার সমর্থকরা ইনান ভাইয়ের উপস্থিতিতেই আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এসময় আমাদের দুজন জুনিয়রের হাত কেটে যায়। 

ঘটনা প্রসঙ্গে তানভীর হাসান সৈকত বলেন, গতরাতে জগন্নাথ হলে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের সঙ্গে আমার অনুসারীদের একটা ঝামেলা হয়। এ ঘটনার জন্য মধুর ক্যান্টিনে আজ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের কাছে আমার কর্মীরা বিচার দিতে গেলে তার সমর্থকরা আবারও পলাশ এবং অপূর্বসহ কয়েকজন মেরেছে। গত রাতেও ওদের ওপরে হামলা করেছিল। এ বিষয়ে আমরা বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। 

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, গতকাল জগন্নাথ হলে একটা ঝামেলা হয়েছে শুনেছি। সেটা নিয়েই আজকে মধুর ক্যান্টিনে ছোট-খাটো ঝামেলা হয়েছে। সেখানে আমার ও তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী ও প্রার্থীরা ছিলো। ঘটনা আমরা খতিয়ে দেখবো এবং কে অপরাধী তা শনাক্ত করবো। অপরাধী যেই হোক না কেন, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জগন্নাথ হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, গতকাল রাতে আমাদের হল মাঠে শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি সমস্যা হয়েছিলো। আমি তাদেরকে ডেকে সমস্যার সাময়িক সমাধান করেছি। তবে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করবো এবং জড়িতদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবো। 

কেএইচ/এমএসএ