রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্যের শেষ দিনে ১৪১ জনের নিয়োগের প্রক্রিয়াকে বিধিবহির্ভূত ও অবৈধ উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের ১৬ শিক্ষক। শুক্রবার (৭ মে) রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষকদের এ অংশটি।

পাশাপাশি নিয়োগের ফলে সৃষ্ট অরাজক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন অধ্যাপক তরিকুল হাসান, অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহানুর রহমান, অধ্যাপক এস এম এক্রাম উল্লাহ, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুনসহ ১৬ জন শিক্ষক।

তারা বলছেন, বিধিবহির্ভূত ও অবৈধ প্রক্রিয়ায় ১৪১ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা, ও কর্মচারী এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং এ ঘটনার দায় বিদায়ী উপাচার্য ও তার সহায়তাকারীদেরই নিতে হবে বলে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সদস্যরা মনে করে।

এতে তারা বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগপ্রক্রিয়ার বিরোধী নই। কিন্তু নিয়োগপ্রক্রিয়াটি অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধিমোতাবেক হতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের চাহিদা ব্যতিরেকে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বা কোনো লিখিত-মৌখিক পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের পক্ষে আমরা নই। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বায়ত্তশাসনের সুযোগ খুঁজে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অর্থনৈতিকভাবে উপাচার্যের লাভবানের সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে, যা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমাদের লজ্জিত করেছে।

পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়াকে অবৈধ ও চাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, অস্থায়ী ভিত্তিতে তুলনামূলক নিম্নপদগুলোয় মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ জন ছাত্রলীগ কর্মীকে নিয়োগ দিয়ে পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়াকে চাল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই অবৈধ নিয়োগে কিছুসংখ্যক শিক্ষকের স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়স্বজনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। আবার অধিকাংশ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের খবর ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

এসব শিক্ষকের দাবি, অতীতে তারা বহুবার উপাচার্যের ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিষয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন এবং দুর্নীতিবাজ প্রমাণ করে তার অপসারণ দাবি করেছেন। দাবি মেনে তাকে তখনই অপসারণ করা গেলে উদ্ভূত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হতো বলে মনে করেন তারা।

গেল বছরের ১০ ডিসেম্বর নিয়োগ কার্যক্রমসহ উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনা ২৫টি অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেয়।

বিবৃতিতে শিক্ষকরা বলেন, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা অনেক দিন আগে থেকেই দেওয়া ছিল। এরপরও মেয়াদের শেষ দিনে এসে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দুর্নীতির মাধ্যমে এই অবৈধ নিয়োগপ্রক্রিয়া পবিত্র এই শিক্ষাঙ্গনকে শুধু অশান্ত ও অস্থিতিশীল করেনি, বরং দেশ ও জাতির সামনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে দারুণভাবে ক্ষুণ্ন করেছে।

‘আমরা অবৈধ এই নিয়োগ বাতিল দাবি করছি এবং ক্যাম্পাসে অরাজক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি’, বলেন তারা।

এ ছাড়া সদ্য সাবেক উপাচার্যসহ অবৈধ এই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা গেলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ও প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করেন তারা।

এনএ