করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে গণরুম, স্টাডি রুমসহ অন্তত চারটি রুম থেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র হারিয়েছে বলে অভিযোগ ছাত্রীদের।

বুধবার (২৬ মে) চুরির বিষয়টি ছাত্রীদের নজরে আসে বলে জানান ভুক্তভোগী ছাত্রীরা। এরপরই তারা হল প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেন।

এদিকে চুরির ঘটনার সত্যতা পেলেও ঘটনাটি কখন ঘটেছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি সংশ্লিষ্ট হল প্রশাসন।

এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে ঢাকা পোস্টকে জানান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। এ ছাড়া ছাত্রীদের লিখিত অভিযোগ পেলেই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করবে বলেও জানান তিনি।

চুরির ঘটনা সম্পর্কে ভুক্তভোগী ছাত্রীরা জানান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের স্টাডি রুম এবং ৫২১ ও ৫২৪ নম্বর রুমে চুরির ঘটনা ঘটেছে। চুরি যাওয়া জিনিসপত্রের মধ্যে রয়েছে দুটি মোবাইলফোন, ফ্যান, রাউটার, শাড়ি, জুয়েলারি, জামাকাপড়, কাঁথা ও লেপ। হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিনের মতো হলের প্রতিটি তলা তদারকি করা হয়। এ সময় একটি রুমের তালা খোলা দেখতে পান হলের কর্মচারীরা। পরে তাদের বিষয়টি অবহিত করা হয়।

ভুক্তভোগী ছাত্রীদের অভিযোগ, চুরি যাওয়া জিনিসপত্রের পরিমাণ আরও বেশি। এ ছাড়া ক্যাম্পাস দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা সবাই বাড়িতে অবস্থান করছেন। ফলে আর কোন কোন রুমে চুরি হয়েছে, তা এখনই জানা যাচ্ছে না।

অর্থনীতি বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের ছাত্রী তাপসী দে প্রাপ্তি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্যাম্পাস বন্ধ, হলে হল সুপার, নাইট গার্ড অবস্থান করেন, প্রভোস্টসহ হল স্টাফরা নিয়মিত দায়িত্বে আছেন। নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র ছাড়া আমাদের সবকিছুই তাদের জিম্মায় রেখে এসেছি।

তিনি বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্টসহ হাজারো অজুহাত দিয়ে প্রতিবার প্রভোস্ট-হল সুপাররা চুরির অভিযোগ এড়িয়ে যাচ্ছেন। দায়িত্বে অবহেলার জন্য আমাদের এ বিশাল ক্ষতির দায় হল প্রশাসনকে নিতে হবে। হলে সিসিটিভি ক্যামেরাসহ কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করে ভুক্তভোগী ছাত্রীদের ক্ষতিপূরণ অবশ্যই প্রদান করতে হবে।

অর্থনীতি ৪৫তম ব্যাচর শিক্ষার্থী নূর-ই-জান্নাত বলেন, রুমের তালা সব ঠিক, কিন্তু রুম থেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র নাই। ফ্যান, রাউটার, গয়না, জামাকাপড় সব চুরি হয়ে গেছে। বাইরের কেউ না বরং হলের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন, না হলে এমন কাজ বাইরে থেকে অসম্ভব।

এ বিষয়ে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সুপার বেনজির বিউটি ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিরাপত্তার ঘাটতি আছে বলে মনে করি না। তবে হলের কিছু নির্মাণকাজ দীর্ঘ দেড় বছর ধরে চলছে। এর ফলে আমাদের কিছু সমস্যা হচ্ছে, পর্যাপ্ত লোকবল আমাদের নেই। তদন্ত হলে বিস্তারিত জানতে পারব আমরা।

হলের আবাসিক শিক্ষক ও তদন্ত কমিটির প্রধান সোলনারা আকতার বলেন, শিক্ষার্থীদের মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা জেনেছি এবং হলে গিয়ে দেখেছি চুরির ঘটনা ঘটেছে। ভু্ক্তভোগী ছাত্রীরা লিখিত অভিযোগ দিলেই আমরা আমরা তদন্ত কার্যক্রম শুরু করব।

হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো বজ্রপাতে নষ্ট হয়েছে। এগুলোর কাজ যারা করেন, যেসব টেকনিশিয়ানও নাই। তবে চুরির ঘটনা দেখেছি এবং তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।

এনএ