প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) প্রধান প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম কর্মকর্তাদের দ্বারা লাঞ্ছিত হওয়ার ১৫ দিনের মাথায় বিচার না পেয়ে পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার (২৯ জুন) তিনি ব্যক্তিগত সমস্যার কথা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিজয় কুমার বহ্ম বরাবর পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিজয় কুমার বহ্ম পদত্যাগপত্র পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগ ও কর্মকর্তা সমিতির মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষই আমাদের নিকট লিখিত পত্র দেন। প্রকৌশল দফতরের লিখিত পত্রে অফিসার সমিতির নেতাদের বিরুদ্ধে গত ১৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামকে তার কক্ষে গিয়ে লাঞ্ছিত করা, গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া ও পিকনিকের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারদের নিকট থেকে চাঁদাবজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগগুলো স্পর্শকাতর হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক কামরুজ্জামানকে আহ্বায়ক এবং আমাকে সদস্য সচিব করে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। 

কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খায়রুল আলম এবং ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ। তদন্ত কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে তদন্ত কমিটি এখনো কাজ করছে বলে জানান বিজয় কুমার বহ্ম। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও অসদাচারণের কারণে কোনো ভদ্রলোকের আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করার পরিবেশ নেই। আমিনুল স্যারের মতো একজন সজ্জন ব্যক্তির সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা চূড়ান্ত রকম নোংরামির দৃষ্টান্ত। বিকল্প না থাকায় আমাদের এ পরিবেশে চাকরি করতে হচ্ছে।

সদ্য পদত্যাগ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। কারও দাবির মুখে নয়। এর বেশি কিছু তিনি আর বলতে রাজি হননি।

তবে প্রকৌশল দফতরের সেকশন অফিসার তৌফিকুর রহমান বলেন, প্রধান প্রকৌশলী স্যারকে বিনা কারণে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। লুটপাটের যে অভিযোগ করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে চাবি নিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্নভাবে তাকে অপমান অপদস্ত করার কারণেই তিনি নিজেকে সরিয়ে নিলেন। আমিনুল স্যারের সততা নিয়ে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই। বরং আমরাই খারাপ বলে ভালো মানুষের মূল্যায়ন করতে পারলাম না। 

পাবিপ্রবি অফিসার্স সমিতির সভাপতি হারুনুর রশিদ ডন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলের অর্থ অপচয় রোধ ও চলমান পাঁচশ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে নানা অনিয়ম এবং সেসব অনিয়মের বৈধতা দিতে ভুয়া বিল ভাউচারে কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরে বাধ্য করার প্রতিবাদে আমরা প্রধান প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামের অব্যহতি চেয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের দাবিতে কর্ণপাত করেনি। উপাচার্য রোস্তম আলী স্যার ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত ক্যাম্পাসেই আসেননি। অচলাবস্থা নিরসনে কোনো উদ্যোগও নেননি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা গত ২০ জুন থেকে কর্মবিরতি শুরু করি।

পাবিপ্রবি অফিসার্স সমিতির সাধারন সম্পাদক সোহাগ হোসেন বলেন, আমরা সব সময় চুক্তিভিত্তিক নিয়েগের বিপক্ষে। প্রধান প্রকৌশলী স্যার যেহেতু চুক্তিভিত্তিক তাই আমরা তার অপসারণ চেয়েছিলাম।   

এ বিষয়ে পাবিপ্রবি উপাচার্য এম রোস্তম আলীর মুঠোফোনে মঙ্গলবার রাতে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

রাকিব হাসনাত/আরএআর